পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজের ছাঁটা হাতী আছে—আপনাকে হাতীর সবিধে করে দিতে পারি, কিন্তু নদী পেরিয়ে সে সব হাতী এদিকে তো আসে না। চিঠি লিখে আনাতে গেলে পনেরো দিন দেরি হয়ে যাবে। মৌংপের বড় মেয়েটি খাব বন্ধিমতী। লেখাপড়ায় আগ্রহ তারই বেশি। প্রাকৃতিক দশ্য বলে যে একটা জিনিস আছে-মাংড শহরের মধ্যে সে-ই একমাত্র বিস্মী মেয়ে যে এ খবর রাখে । তার বাবা উঠে গেলে সে আমায় বললে—আপনি এখানে কতদিন থাকবেন ? —বেশি দিন না। দশ-বারো দিন যদি থাকি খাব বেশি। --তবে আপনি আরাকান ইয়োমা দেখবার আশা ছাড়ন-পায়ে হেটে যাবেন। বলচেন, তাতে এক মাসের মধ্যে ওখান থেকে ফিরতে পারবেন না। আমি আপনাকে আর একটা পথ বলে দিই-একটা রাস্তা আছে, দেবাং আর আরাকান ইয়োমার মাঝখান দিয়ে চীনদেশ। পয্যন্ত গিয়েচে-এ পথে গভর্নমেণ্টের ডাক যায়। মংড থেকে। আপনি মেলভ্যানে সিংজ পয্যন্ত যান, সেখান থেকে হেটে যাবেন-আমি বন্দোবস্ত করে দিতে পারবো। কিন্তু দজন লোক নেবে না মেলভানে। ਅਫ਼ਯੋ বললাম, তাহলে আমারও যাওয়া হবে না, কারণ বন্ধকে ফেলে তো যেতে See মেয়েটি বড় ভালো। ওর এক মামা ডাক-বিভাগে কাজ করেন, তাঁকে দিয়ে সে। চেন্টা করেছিল, কিন্তু শেষ পয্যন্ত তারা মেলভ্যানে নিতে রাজী হল না। দ’জনকে। সরেনবাব পিছিয়ে গেলেন। তিনি এগার টাকা ভাড়া দিয়ে মেলভ্যানে যেতে রাজী নন। হেটে যতদরি হয় যেতে পারেন। এর কিছদিন পরে সরেন্দ্ৰবাব মংড থেকে চলে গেলেন এবং আমি একা মেলভ্যানে সিংজ্য রওনা হলাম। মংড ছাড়িয়ে প্রথম পঞ্চাশ-ষাট মাইল যেতে যেতে মনে হয়। বাংলাদেশের নোয়াখালি বা ময়মনসিং জেলার ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে চলেচি। এমন কি আম-কাঁঠালের বাগানও চোখে পড়ে। তার পর নিবিড় জঙ্গল, আরাকান ইয়োমা পৰ্ব্ববতশ্রেণীর বহর নীচ শাখা-প্ৰশাখা পথের দােপাশে দেখা যেতে থাকে। ছোটবড় গ্রাম সব্বত্র, নিবিড় বন কোথাও নেই, মাঝে মাঝে ঝোপঝাপ ও সেগন গাছের সাজানো বাগান। বৌদ্ধমন্দির প্রত্যেক গ্রামেই আছে, আর আছে ছোটখাটো দোকানপশারওয়ালা বাজার। দতিনটি চা-বাগানও পথে পড়ে। সিংজ পৌছে গেল প্রায় সন্ধ্যার সময়। ডাকগাড়ির চালক হিন্দপথানী, তার সঙ্গে ইতিমধ্যে খব ভাব করে নিয়েছিলাম, রাত্রে তার তৈরী মোটা-হাতে-গড়া-রটি খেয়ে তার ঘরেই শহয়ে রইলাম। পরদিন সে বললে-চলন বাবজি, এখান থেকে মেলপিওন ডাকব্যাগ নিয়ে জঙ্গলের পথে অনেকদরে যাবে, আপনার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই, তার সঙ্গে যাবেন । সকাল আটটার সময় সিংজ থেকে বার হয়ে আকিয়াব-গামী বড় রাস্তায় পড়লাম। এখান থেকে আরাকান ইয়োমা পৰ্ব্ববতের উচ্চ অংশ দন্টিগোচর হয়। এই পৰ্ব্বতমালা সমদ্রোপকলের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে আকিয়াব থেকে প্রায় রেঙ্গনে পৰ্যন্ত বিস্তত। সিতাং এ অঞ্চলের একটি বড় নদী, এই নদীর শাখাপ্রশাখা অনেকবার পার হতে হয়, আকিয়াব রোডের ওপর অনেকগলি সেতু আছে, এই নদীর বিভিন্ন শাখার OSR