পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম আসবার পথে একদিন এই চন্দ্রনাথ পাহাড়কে দরি থেকে দেখেছিলাম, তখন মনে ভেবেছিলাম চাটগাঁ পৌঁছেই আগে চন্দ্রনাথ দেখতে হবে। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তা আর তখন হয়ে ওঠেনি। আজ দেরাং আর আরাকান ইয়োমা পর্বতশ্রেণী ও অরণ্যভূমি বেড়িয়ে এসে চন্দ্রনাথ পাকবািতকে নিতান্ত উইঢিবির মতো মনে হচ্চে। হাজার-দেড় কি সতেরোশ’ ফট উচ্চ পাহাড় আবার কি একটা পাহাড় নাকি! কিন্তু এ ভুল। আমার পরে ভেঙেছিল, সে কথা বলচি। সীতাকুন্ড গ্রামের মধ্যে কৰ্ত্তার পরিচিত এক পান্ডার বাড়ি গিয়ে দজনে উঠলাম। আমার সঙ্গী এ অঞ্চলে একজন বিখ্যাত লোক ও জমিদার, সীতাকুণড গ্রামে তাঁর নিজের একখানা বাগানবাড়ি আছে, অপরিস্কার হয়ে পড়ে আছে বলে সেখানে ওঠা হয়নি -এই পান্ডটি এর আশ্রিত ও অনগত ব্যক্তি, তাই এখানেই ওঠা হল—তীৰ্থ করে পণ্য অজ্ঞজন করবার জন্যে নয়। মৃত্যুঠাকুর অবশ্য বাঙালী ব্রাহ্মণ, আমার বললে-পাহাড়ে উঠবেন না? সন্মান আমার সঙ্গী হেসে বললেন-তোমায় নিয়ে যেতে হবে না ঠাকুর মশাই। উনি নিজেই যেতে পারবেন, অনেক পাহাড় জঙ্গল ঘরেচেন একা-তোমাদের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একা যেতে আটকাবে না। ওঁর। পান্ডাঠাকুরের প্রাপ্য তাহলে মারা যায়-সে তা ছাড়বে কেনা! আমাকে নিয়ে সে পাহাড়ে উঠলো। চন্দ্রনাথের বাক্ষলতার শোভা আমার মন মগধ করলে ওঠবার পথে, বিরপক্ষ মন্দির ছাড়িয়েই। অনেক বড়লোক পাহাড়ে ওঠবার সিড়ি তৈরি করে দিয়েচে নিজেদের পরলোকগত আত্মীয়দের সমিতিরক্ষার জন্যে, মাৰেবল পাথরের ফলকে তাদের নামধাম লেখা আছে, আমার তো খব ভালো লাগছিল প্রত্যেকখানি মাঝেবল পাথরের ফলক পড়তে, ওঠবার সময় অনেক দেরি হয়ে গেল। সেজন্যে । বিরপক্ষ মন্দির ছাড়িয়ে অনেক দর উঠে একটা পাহাড়ী ঝরনা নেম আসচে, সেখান থেকে পথ দভাগে ভাগ হয়ে দদিক দিয়ে ওপরে উঠেচে। এই পব্বতে উঠে হঠাৎ পিছন ফিরে চেয়েই দেখি নীল সমদ্র ও সন্দ্বীপের অস্পষ্ট সবজি তটরেখা ! সেখানে বাঁধানো সিড়ির ওপরে বসে রইলাম খানিকটা। সামনের পাৰস্বত্য ঝরনার কুল কুল ধবনি, বন-ঝোপের ছায়া, বন-কুসমের সবাস ও দারের নীল সমন্দ্রের দশ্য যেন চোখের সামনে এক মায়ালোকের সন্টি করেচে, উঠতে ইচ্ছে হয় না। পান্ডা বললে, বড় দেরি হয়ে যাবে বাবা, চলন ওপরে। আমরা দজনে ওপরে উঠতে লাগলাম। নিবিড় মালী বাঁশের বন, গাছ পাতা ও লৈ তাঝোপের বিচিত্র সমাবেশ। মাঝে মাঝে ঝরনা নেমে আসচে বড় বড় পাথরের পাশ কাটিয়ে মাঝে মাঝে বনের ফাঁক দিয়ে সমদ্র দেখা যাচ্চে, মাঝে মাঝে আড়াল পড়চে বন-বোপের । চন্দ্রনাথে পাহাড়ের দশ্য এদিক দিয়ে অন্য অনেক পাব্বিত্য দশ্য থেকে সম্পপণ পথক । অন্য সব জায়গায় পাহাড় আছে, কিন্তু হয়তো বনানী নেই ; যদিও বন থাকে তবে একঘেয়ে বন। একই গাছের, ইংরেজিতে যাকে বলে homogenous forest, যেমন আছে সংস্কৃভূম, মানভূম, স্যারেন্ডা প্রভৃতি অণ্ডলে। সে বনের বৈচিত্র্য নেই, মনকে ৩২ আনন্দ দেয় না, চোখকে তত তৃপিতি দেয় না। আরাকান ইয়োমা পৰিবতের বনভূমি যে প্রকৃতির, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের বনও সেই 9S