পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দখে আমার স্ত্রী বলেছিল, এই বাব খােব বড়লোকের ছেলে। আমরা বাবা, দেখলেই মানষি চিনতে পারি। সে বিষয়ে অবিশ্যি কোনো সন্দেহ রইল না। —বােব আপনি বিয়ে করেচেন ? —ওঃ কোন কালে। তিন-চারটি ছেলেমেয়ে হয়ে গেল। —তাহলে খাব অলপ বয়সে আপনার বিয়ে হয়েছিল ? –হাঁ, তখন আমার বয়স আঠারো। আমার শবশীর একজন বড়লোক। কলকাতায় ’মঙ্গীত ব্যবসা । - তা তো হবেই বাবা, তা আপনি যখন আমার যজমান হলেন, যদি কখনো কলকাতায় যাই, আমার একটা থাকবার জায়গা হল। -- নিশ্চয়! আমার বাড়িতে গিয়েই দয়া করে উঠবেন। পান্ডাঠাকুর আমার কথায় খশী হয়ে তাঁর সন্ত্রীকে বললেন-ওগো শোনো, বাব दिक दव्लgbन्म । আমি বিপদে পড়লাম, মেয়েদের কাছে বাজে কথা বলি কি করে ? কিন্তু ভগবান আমায় সে-বার দায় থেকে মন্ত করলেন ; পান্ডাঠাকুরের সন্ত্রী এসেই আমাকে বললে, আপনি যদি কাল কুমারী পজো করেন। তবে আমায় বলবেন, আমি যোগাড় করে রেখে দিয়েচি দজনকে। {የ আমি বললাম, কাল আমি বাড়িয়াডাল যাবো, ওদিকের পাহাড় আর জঙ্গলগালো দেখে আসি, কাল আমার দরকার হবে না। এদের আমার বড় ভালো লেগেছিল। অত্যন্ত সরল এরা, যা বলেচি, সব এরা বিশদ্বাস করে নিয়ে খশী হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বোলা পড়লে আমি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের তলায় একটি ঝরনার ধারে বেড়াতে যৌতুম। সন্ধ্যাবেলােয় স্থানটি এক অপরােপ শ্ৰী ধারণ করতো। গাছপালার শ্যামলতা, বনকুসমের শোভা, সম্পম খের, শৈলশ্রেণীর গম্ভীর উন্নত সৌন্দয, বনের পাখীর ডাক, ঝরণার কুলকুলা শব্দ-আর সকলের ওপরে স্থানটির নিবিড় নিজজনতা আমাকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় টেনে নিয়ে যেতো সেখানটিতে। চপ করে বসে থাকবার মতো জায়গা বটে। কি দীঘণ্টা বসে থেকেও আমার যেন তৃপিত হত না। সন্ধ্যার ঘণ্টাখানেক পরা পর্যন্ত, ঝরনাটার ওপরে একটা ছোট কাঠের পােল আছে সেখানে বসে থাকতুম। কোনো সস্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দয্য উপভোগ করবার একটি বিশেষ টেকনিক আছে । আমার জীবনে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দ্বারা আমি সে টেকনিক অজ্ঞজন করেচি, তাতে হয়তো অপরের উপকার নাও হতে পারে। আমার মনে হয় প্রত্যেক প্রকৃতিরাসিক ব্যক্তি অভিজ্ঞতার দ্বারা নিজের টেকনিক নিজেই আবিহুকার করেন। প্রকৃতির রাজ্যে মানষের যেতে হয় একাকী, তবেই প্রকৃতির রানী অবগঠন উন্মোচন করেন। দশকের সামনে, নতুবা নয়। চপ করে বসে থাকতে হয়, একমনে ভাবতে হয়, মাঝে মাঝে চারিদিকে চেয়ে দেখলে মনে আপনিই কত ভাবনা এসে পড়ে। সে সব চিন্তার সঙ্গে কখনোই পরিচয় ঘটে না লোকালয়ের ভিড়ে। এমন কি, সঙ্গে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি থাকলেও প্রকৃতির সৌন্দয্যকে পরিপািণভাবে উপভোগ করা যায় না। সন্ধ্যার পরে অস্পষ্ট মেটে জ্যোৎসনা উঠে সে বনপৰ্ব্ববতের শোভা শতগণ বাড়িয়ে তো, কি একটা বনফলের সবাস ছড়াতো বাতাসে, মনে হত সমগ্র পথিবীতে 86.