পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার ইচ্ছে ছিল না। টাকার কথা তোলবার, উনিই তুললেন, কাজেই আমায় বলতে হল। রাত্রে শয়ে কেবলই মনে হতে লাগলো। উনি এখন একটা টাকা পাবেন কোথায় ? বলে ভালো করিনি। কিন্তু টাকা নিতে না চাইলে ভদ্রলোকের আত্মসম্পমানে আঘাত দেওয়া হয় এদিকে, সতরাং টাকা দিতে চাইলে নেবো নিশ্চয়। ভোরে উঠে দেখি আমার সঙ্গী কোথায় বেরিয়েচেন আর আসেন না। আটটার সময় আমাদের রওনা হবার কথা, ছেলে দটি আমায় ডাকতে এসে বসে রইল, দশটা বাজে, তখনও দেখা নেই তাঁর। প্রায় সাড়ে দশটার সময় তিনি এলেন, আমাদের দেখে যেন কেমন হয়ে গেলেন। আমরা বললাম, আপনার জন্যেই বসে আছি। চলন বেলা হয়ে গেল। ভদ্রলোক আমতা আমতা করে বললেন—হাঁ, এই একটা কাজে বেরিয়েছিলাম। তা এইবার—। খানিক পরে আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, আমার তো যাওয়া হবে না বিভূতিবাব, আমার একটি কাজ আছে আজ-- আমি বললাম, তা কখনো হয়! আপনাকে যেতেই হবে। আপনার জন্যে আমরা বসে আছি দেখােন কতক্ষণ থেকে। তিনি কিছতেই যেতে চাইলেন না। তাঁর মািখ দেখে যেন বিষন্ন ও নিরৎসাহ বলে মনে হল। আমার তখন কিছ মনে হয়নি। কিন্তু তারপরে আমার এ ধারণা হয়েছিল যে ওঁর যাবার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাঁদার একটি টাকা যোগাড় করে উঠতে না পেরে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন। হয়তো বা সকালে টাকার চেস্টাতেই বেরিয়ে থাকবেন। আমি বিশেষ নিরৎসাহ হয়ে পড়লাম ভদ্রলোক না যাওয়াতে। কিন্তু কি করি, কোনো উপায় ছিল না। কুঞ্জবন প্যালেস ছাড়িয়ে আরও প্রায় দ মাইল পিছনে একটা ভাঙা বাড়ি আছে কাদের। সেখানে চারদিকে ঘন বন, পাহাড়ী ঝরনা, মালী বাঁশের ঝাড়, বাঁশবনের আড়ালে টিপ্ৰাইদের ক্ষমাদ্র গ্রাম-চমৎকার নিরিবিলি জায়গা। একটা টিলার মাথায় সেই ভাঙা বাড়িটা। নীচে বাঁশবনের ছায়ায় ঝরনার ধারে রান্নাবাষা জল তুললাম। গ্রাম থেকে টিপ্ৰাইদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মখে আমাদের কান্ড দেখতে লাগলো। বেলা যখন প্রায় তিনটে বাজে, তখন হঠাৎ "বিভূতিবাব! বিভূতিবাব!' বলে কে যেন ডাকচে-দর থেকে শািনতে পেলাম। আমরা সবাই উৎকৰ্ণ হয়ে রইলাম। বাঁশবনের ওপারের পথে টিলার পাশে দীর থেকে কে যেন ডাকচে ঠিকই। আমরা ভুকুর সব জােরে হকি দিলাম, এই যে এখানে! আমাদের একজন রাস্তার দিকে 5 gशब्न। অলপক্ষণ পরেই দেখি আমার গোস্ট-হাউসের বন্ধটি লম্বা লক্ষবা পা ফেলে বাঁশবন ভেঙে হাসিমখে আমাদের দিকেই আসচেন। —এলাম। আপনাদের কাছে, না এসে কি পারি! কাজটা শেষ হয়ে গেল, তাই বলি, যাই। তারপর, কতদর হল ? অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁকে পেয়ে আমরা তো অত্যন্ত খাশী। আমার সত্যিই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ভদ্রলোক না। আসাতে। তিনি বললেন-এসব জায়গা আমার পরিচিত, পায়ে হোটে কতবার এসেছি। আপনারা যখন বললেন কুঞ্জবন প্যালেসের উত্তরের পাহাড়ে যাবেন, তখনই ভেবেচি। এই জায়গা। একট চা খাওয়ান তো আগে, উঃ হপিয়ে গিয়েচি আমরা তাঁকে পেয়ে যেমন খাশী, তিনিও আমাদের পেয়ে তেমনই খাশী। 6ኔፍ