পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাকে সব পথানে পাওয়া যায় না। সে রাপে, কিন্তু মানষি সব জায়গাতেই আছে। -প্রত্যেকের মধ্যেই এক একটা অদ্ভুত জগৎ, দেখতে জানলেই সে জগৎটা ধরা দেয়। তাই দেখতেই পথে বার হওয়া। মানষের বিভিন্ন রােপ দেখবার আমার চিরকাল আগ্রহ, নতুন দেখলেই মনে হয় ওর সঙ্গে বসে একটি আলাপ করে ওকে চিনি। দেখতে চেয়েছিলাম বলেই বোধ হয় কত রকমের মানষেকেই যে দেখালেন জীবনে! মানষেকে জেনে চিনে লাভই হয়েচে, ক্ষতি হয়নি, একথা আমি মন্তকণ্ঠে বলবো। হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপাতত ক্ষতি বলে মনে হলেও, ভবিষ্যতে মনের খাতায় তাদের অঙ্ক পড়ে গিয়েচে লাভের দিকেই। মানষের অন্তর একটি রহস্যময় বিরাট 'বিশ্বব, এর সীমা নেই, শেষ নেই। মানষের অন্তলোক আবিস্কারের অভিযান, উত্তর:দক্ষিণমের অভিযানের মতই কািট ও অধ্যবসায় সাপেক্ষ, সেই রকমই বৈচিত্র্যময়। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, আপনি এখানে থাকুন আরও কিছদিন। আমি বললাম, আমার থাকবার যো নেই, নইলে নিশ্চয়ই থাকতুম। —এখন আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছে হয় না, আবার কবে আসবেন বলেন। --তার কোনো ঠিক নেই, তবে এদিকে এলেই আপনার এখানে আসবো। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হলেও চেহারা এখনও যািবকের মতো। অমন উদার মািখশ্ৰী আমি খাব বেশি লোকের দেখিনি। আর সব সময়েই আনন্দ হাসিখশি নিয়েই আছেন। আমায় বললেন, দেখান, আমার ইচ্ছে করে লোকজন নিয়ে খাব আমোদ করি। • সকলেই আমার এখানে খাওয়াদাওয়া করিক, সবাইকে নিয়ে থাকি। একবার কি হল জানেন, ক-দিন ধরে একটি পয়সা আর নেই, আমার জমানো টাকা বলে কিছ বড় নেই তো—যা আয়, তাই-ই ব্যয়। একদিন আমার সন্ত্রী বললেন, শািন্ধ ডাল আর ভাত ছাড়া আর কিছর ব্যবস্থা নেই। শািন্ধ ডাল দিয়ে ভাত মেখেই সবাইকে নিয়ে আমোদ করে খাওয়া গেল। আমি একা বসে খেতে পারিনে। সত্যিই তাই দেখেছি। এর বাড়ি। দিনমানে সকলের একসঙ্গে খাওয়া বড় একটা হয়ে ওঠে না ; কারো কাছারি, কারো স্কুল। কিন্তু রাত্রে ভিতরবাড়ির রান্নাঘরের দাওয়ায় আঠারো-উনিশাখানা পিাড়ি পড়বে। উকিলবাবার পিাড়ি মাঝখানে, তাঁর আশেপাশে তাঁর আশ্রিত দরিদ্র ছাত্ৰগণ, তাঁর ছেলেমেয়েরা, অতিথি-অভ্যাগতের দল। - সবাই যা খাবে তাঁকেও তাই দেওয়া হবে। খাওয়ার সময় সে একটা মজলিসের ব্যাপার। উকিলবাব, গলপ করতে ভালোবাসেন, গলপ করতে পারেনও । ছাত্রদের উপদেশ দেন, তাঁর প্রথম জীবনের ছোটখাটো ঘটনা বলেন, হাসির গলপ করেন। আমি মজলিশে বিশেষ কোনো আনন্দ পাই নি তার কারণ আমি নবাগত, ওদের কাউকে চিনিনে, অলপদিনের পরিচয়। এসব ক্ষেত্রে যেমন হয়, উকিলবাব যখন কথা বলচেন, সেখানে আর কেউ বলতো না কিছ, তিনিই একমাত্র বক্তা। যেমন, আমাকে কখনো তিনি কিছর বলবার অবকাশ দেননি। আমার ইচ্ছে করলেও বলতে পারতাম না। আমার মনে হত । ভদ্রলোক খব ভালো কিন্তু বড় সংকীর্ণ জগতে নিজেকে আবদ্ধ রেখেচোন। ওঁর জগৎ এই নিজের বাড়িটি নিয়ে, এই আশ্রিতজনদের নিয়ে, এদের মধ্যে রাজত্ব -করেই তাঁর প্রতিষ্ঠা। এদের বাইরে অন্য কোনো জগৎ ইনি দেখেচেন কি ? কখনও দেখবার তৃষায় ব্যাকুল হয়েচেন কি ? না দেখলেও কোনো ক্ষতি নেই, যদি অতৃপ্তত আকাঙ্ক্ষার আকুলতা মনের মধ্যে সদাজাগ্রত থাকে। বাসনা ও ব্যাকুলতা মনের যৌবন। ‘ও দটো চলে গিয়েচে যে মন থেকে সে মনে Ü6)