পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজজন মনষ্যেবসতিশন্য স্থানে বন্যজন্তুর আকস্মিক আবিভােব বিচিত্র কি! কেউ কোথাও নেই, এই সময় একা বনচ্ছায়ায় শায়িত অবস্থায় এই উপত্যকারী: সৌন্দয্য ও নিবিড় শান্তি ভালো করে আমার মনে অন্যপ্রবিদ্ট হয়ে গেল। এইখানে প্ৰবন্ধ নারিকেলা (Starculia Alata) নামে সর্ববৃহৎ বনস্পতি প্রথম দেখি-তারপর অবিশ্যি মধ্যভারতের অরণ্য-প্রদেশে এই অতি বহৎ ব্যক্ষ দেখেছি। নাম যদিও ‘বন্ধে নারিকেল”-এ গাছের চেহারা অনেকটা বিড়িপাতার গাছের মতো—প্রকাশড মোটা গড়ি, ভীষণ উচু, সোজা খাড়া ঠেলে উঠেচে আকাশের দিকে, চওড়া বড় বড় অনেকটা তিত্তিরাজ গাছের মতো পাতা-পত্র-সমাবেশ অত্যন্ত ঘন। বনস্পতিই বটে, এর পাশে শাল গাছকে মনে হয় বোটে বঙ্কু। অবিশ্যি ও জঙ্গলে কি ভাবে এ গাছের নাম জানলাম তা পরে বলবো। কিছফক্ষণ পরে হেমেন ফিরে এসে আনন্দের সঙ্গে বললে—খব ভালো সনানের জায়গা আবিস্কার করে এলাম, বেশ একটা গভীর ডোবার মতাে—চলোঁ। আমি জিনিসপত্র নিয়ে যেতে চাইলাম। হেমেন বললে—‘এইখানে থাক না পড়ে, তুমিও যেমন, কে নেবে এই জঙ্গলে ? আমি বললাম—থাক। তবে খাবারের পাটলিটা নিয়ে যাওয়া যাক নেয়ে উঠে সেখানে বসেই খেয়ে নেবো। পরে দেখা গেল এ প্রস্তাব করে কি ভালোই করেছিলাম!' ভাগ্যে খাবারের পাটলি রেখে যাইনি। গিয়ে দেখি বনের মধ্যে আসলে পাহাড়ী ঝরনাটাই একটা খাতের মতো সন্টি করচে। একটা মানষের গলা পয্যন্ত জল ডোবাটাতে। সনান সেরে শালবনের ছায়ায় বসেই আমরা জামালপার থেকে কেনা পরী ও জিলিপি খেলাম, তারপর ঝরনার জল খেয়ে নিয়ে আমরা আগের সেই শালবনের তলায় ফিরে এসে দেখি, হেমেন যে ছোট সটকেসটি ফেলে গিয়েছিল সেটি নেই। এই জনহীন বনে সটকেস চুরি করবে। কে ? কিন্তু করেচে। তো দেখা যাচ্চে। সতরাং মানষে নিশ্চয়ই এখানে কোথাও আছে। আমরা সে দলের লোক নই, যে দলের একজন চিড়িয়াখানার জিরাফ দেখে বলেছিল—অসম্পভব! এমন ধরনের জানোয়ার হতেই পারে না! এ আমি বিশবাস করিনে। হেমেন বললে—নতুন সটকেসটা ভাই, সেদিন কিনে এনেচি কলকাতা থেকে— –কিন্তু নিলে কে তাই ভাবচি— —আমার মনে হয়। বনের মধ্যে রাখাল কি কাঠকুড়নি মাগী ঘরতে ঘরতে এদিকে এসেছিল—বেওয়ারিশ মাল পড়ে আছে দেখে নিয়ে গিয়েচে —জিনিসের আশা ছেড়ে দিয়ে চল। এখন ঋষ্যশােঙ্গ মনির আশ্রমের খোঁজ করি।-- আবার সেই ‘বন্ধ নারিকেল” পথে পড়লো। এ গাছের দিকে চেয়ে শ্রদ্ধা হয় বটে। এই জাতীয় গাছই বনস্পতি নামের যোগ্য। কলের চিমনির মতো সোজা উঠে গিয়েচে, দেবদাররা মতো কালো মোটা গাড়ি-ওপরের দিকে তেমনি নিবিড় শাখাপ্রশাখা ; তবে গাছটাতে শাখা-প্ৰশাখা দরে ছড়ায় না.অনেকটা ইউক্যালিপটাস মুচুর ধরনে ওপরের দিকে তাদের গতি। হেমেন হঠাৎ বললে—“দেখ, দেখ-ওগলি হে ? সত্যি ভারি অপব্ব দশ্য বটে। একটা গাছের ডালপালায় কালো কালো কি ফল বুলিচে, রাশি রাশি ফল, প্রত্যেক ডালে দশটা-পনেরোটা-ভারি চমৎকার দেখাচ্চে এখােন থেকে ।

  • হেমেন বললে—একটা নয় হে, ও রকম গাছ-আরও রয়েচে ওর পাশেই

AA