পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হল এই নিজজন উপত্যকায় মন্দির-মধ্যে একা রাত্রিযাপনের বিপদ সে অবস্থায়। হেমেন বললে, মাতাজী, আপনার দেশ কোথায় ? -গহস্থ-আশ্রমের নাম বলতে নেই। তবও বলি, আমার বাড়ি ছিল এই বেগসরাইয়ের কাছেই। আমি এ দেশেরই মেয়ে। আমার চাচা আগে এ আশ্রমের সেবাইত ছিলেন, তারপর থেকে আমি আছি। এতক্ষণে অনেকখানি ব্যাপার। আমাদের কাছে পরিৎকার হয়ে গেল। এই দেশের মেয়ে এবং সম্পভবত বাল্যকাল থেকে ওঁর চাচাজীর সঙ্গে এখানে অনেকবার গিয়েচেন এসেচেন। অনেকেই চেনে এদেশে। আমি বললাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো মাতাজী, মাপ করবেন, আপনি কি বিবাহ করেন নি ? আমি বিধবা, তেরো বছর বয়সে স্বামীর মৃত্যু হয়, সেই থেকেই গৈরিক ধারণ তারপর তিনি নিজের জীবনের কথা বলে গেলেন। ওঁর কথার মধ্যে একটি সতেজ সজীব নারীমনের পরিচয় পেয়ে আমি ও আমার বন্ধ দরজনেই এক নতন জগৎ আবিস্কারের আনন্দ অনভব করলাম, ভেবে দেখলাম। এই সন্ন্যাসিনীর যদি বয়স আরও কম হত। তবে এর জীবনের ইতিহাস শনে আমরা অন্তত মনে মনেও এর প্রেমে না পড়ে পারতুম না-সেই বয়সই ছিল আমাদের। হেমেন বললে, আপনাকে এ বনে খাবার-দাবার কে এনে দেয় ? —কিউল থেকে আমার শিষ্যরা আসে, ওরাই নিয়ে আসে, হাপাতায় দদিন। —আপনি সত্যিই অদ্ভুত মেয়ে। এ রকম মেয়ের সাক্ষাৎ বেশি পাওয়া যায় না। —কিছ না, পরামাত্মা যখন ডাকেন, তাঁর সব কাজ তিনিই করিয়ে নেন। আমি বিধবা হয়ে একমনে তাঁকে ডেকেচি, ঘরের বাইরে আসবার চেন্টা করেচি যে কত! সংসার আদৌ ভালো লাগতো না, বাইরে বেরতে ইচ্ছে থাকতো কেবল। জপতপ করবার কত বাধা সংসারে। আমি-আমাদের বেগ সরাইয়ের বাড়ির পিছনে ছোট একটি তেতুল গাছ আছে—কাছেই কিউল নদী— আমি বললাম, বেগ সরাই মহকুমা ? সেখানে তো—এই লক্ষীসরাইয়ের কাছে বেগ সরাই, ছোট্ট গাঁ-কিউল নদীর ধারে। তারপর শোনো ছেলেরা, কিউল নদীর ধারে সেই তেতুল গাছের কাছে বসে বসে কতদিন ভগবানকে ডেকেচি যে, আমার একটা উপায় করে দাও, সংসার আমার বড় খারাপ। লাগচে । ভগবানকে ডাকলে তিনি শোনেন। —কি করে জানলেন ? —আমি প্রত্যক্ষ ফল পেয়েচি—একমনে ডাকলে না। শানে তিনি পারেন না। আমার একটি আমোদ লাগলো, কারণ সে সময় আমি নিজে ছিলাম ঘোর agnostic, লেসলি সিস্টফেনের দার্শনিক-মতে অন্যপ্রাণিত, ভগবানকে মানি না যে তা নয়, কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের সন্ধান কেউ জানে না, দিতেও পারেন না”—এই ছিল আমার মত । আমি বললাম, ভগবানকে কখনো দেখেচেন মাতাজী ? —না, সেভাবে দেখি নি। কিন্তু মনে মনে কতবার তাঁকে অনভব করেচি। চোখের দেখার চেয়ে আরও বড়। চোখ ও মন দইই তো ইন্দ্ৰিয়, ভগবানকে বঝাবার ইন্দ্ৰিয় হল মন, চোখ নয়। যদি কেউ বলে। ফলের গন্ধ দেখবো।--সে দেখতে পাবে। না, কারণ গন্ধ অনভব করবার ইন্দ্ৰিয় সর্বতন্ত্ৰ-চোেখ নয়। এও তেমনি PO