পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\OS দিবরাত্রির কাব্য জন্মদিন । জন্মদিনে শ্ৰীচরণে ঠাই পাই। বছরে ওর এই একটা দিনরাত্তির আমার সঙ্গে সম্পর্ক,-হেসে কথাও কয়, ভালও বাসে ।-গা ভূয়ে বলছি ভালবাসে, হেরম্ব !” মালতী মূচকে মুচকে হাসে, “কেন তা জান না বুঝি ? শোন বলি। সেই গোড়াতে, মাথাটা যখন পৰ্য্যন্ত ওর খারাপ হয় নি, তখন পিতিজ্ঞে করিয়ে নিয়েছিলাম, আর যেদিন যা খুন্সী কর বাপু, কথাটি কাইব না, আমার জন্মদিনে সব হুকুম মেনে চলবে। পাগল হলে কি হবে হেরম্ব, পিতিজ্ঞের কথাটি ভোলে নি। মুখ বুজে আজও মেনে চলে।” মালতী বিজয়-গর্বে হাসে, “বিষ খেতে বললে "তাও খায়, হেরম্ব ।” অনাথের এটুকু দুর্বলতা হেরম্ব কল্পনা করতে পারে। ‘এবার জন্মদিনে তাই বরং মাষ্টারমশাইকে খেতে দেবেন, মালতী-বৌদি ।” শুনে মালতী আগুন হয়ে হেরম্বকে ঘর থেকে বার করে দেয় । হেরম্ব আর কোথায় যাবে, প্ৰথম রাত্ৰিতে বারান্দায় দাড়িয়ে বাড়ীর পিছনের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে অদূরবর্তী যে আমবাগান তার চোখে অরণ্যের মত প্ৰতিভাত হয়েছিল, বানপ্ৰস্থাবলম্বীর মন নিয়ে হেন স্ব সেইখানে গেল। এখানে আছে ভোরের পাখীর ডাক আর অসংখ্যা কীটপতঙ্গের প্ৰণয়। পচা ডোবার জলে হয়ত আমিবা আত্মপ্ৰণয়ে নিজেকে বিভক্ত করে ফেলছে, তরু বন্ধলের আড়ালে পিপীলিকার চলেছে শুড়ে শুড়ে প্ৰণয়ভাষণ, হেরম্বের পায়ের কাছ দিয়ে এক হয়ে এগিয়ে চলেছে কর্ণজলৌকা দম্পতী, গাছের ডালে ডালে একজোড়া অচেনা পাখীর ‘লীলাচাঞ্চল্য ।