পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবরাত্রির কাব্য SGR ‘আহা বলুক না সুপ্রিয়া, বলুক। অতিথিকে অশোক এণ্টারটেন করছে বুঝতে পারিস না ? গৃহস্বামীর এই তো প্ৰথম কৰ্ত্তব্য। ওর কথা শুনো না অশোক, তোমার যা বলতে ইচ্ছা হয় এমনি রস দিয়ে বল। তোমার কৰ্ত্তব্য তুমি করবে বৈকি!” অশোকের স্তিমিত চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল। হেরম্ব স্পষ্ট দেখল অসুস্থ স্বামীর লাঞ্ছনায় সুপ্রিয়ার মুখও ব্যথায় স্নান হয়ে গেছে। কিন্তু হেরম্বের মধ্যে যে নিষ্ঠুরতা মরে যাচ্ছিল আজ তা মরণ-কামড় দিতে চায় { গলা নামিয়ে সে যোগ দিল, “তুমি গৃহস্বামী যে !” অশোক দেয়ালের দিকে মুখ করে বলল, “না।-না।” হেরম্ব শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করল, “কি না, অশোক ?” “গৃহস্বামী অসুস্থ। তার কোন কৰ্ত্তব্য নেই।” হেরম্ব বলল, “তাহলে তোমায় বিরক্ত করা উচিত হবে না । আমরা অন্য ঘরে যাই।” হেরম্ব ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সুপ্রিয়া তাকে অন্য একটি ঘরে, যে ঘরের মেঝেতে শুধু মাদুর পাতা ছিল, নিয়ে গিয়ে বলল, ‘বসুন। ওকে একটু শান্ত করে আসি।” “পারবি না। সুপ্রিয়া, ও একটা আস্ত বঁােদর।” “গালাগালি কেন ?” বলে সুপ্রিয়া চলে গেল । শুধু একটি মাদুর বিছানো, একটা বালিশ পৰ্যন্ত নেই। মাদুরটা দেয়ালের কাছে সরিয়ে নিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে হেরম্ব আরাম করে। বসল। হেরম্বের প্রাণশক্তি অপরিমেয়, ঘটনার ঘাত-প্ৰতিঘাত, চেতনার বাদ-বিসম্বাদ সহ করার ক্ষমতা তার অনমনীয়, কিন্তু আজ সে অপরিসীম।