পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবরাত্রির কাব্য ܘܶ তোলা। আনন্দই বোধ হয় সন্ধ্যার সময় এ ঘরে একটি প্ৰদীপ জেলে দিয়েছিল, জানাল দিয়ে হেরম্বের চোখ পড়ল। তেল নিঃশেষ হয়ে প্ৰদীপের বুকে দীপ দপ করে সলতে পুড়ছে। নিজের ঘর থেকে লণ্ঠন এনে হেরম্ব চােরের মত শিকল খুলে মালতীর ঘরে ঢুকল। আলমারিতে ছিল মালতীর কারণের ভাণ্ডার, কিন্তু সবই সে প্ৰায় আজ অনাথের ঘরে সঙ্গে নিয়ে গেছে। খুজে খুজে কাশীর একটি কাজকরা ছোট কালোরঙের মাটির পাত্রে হেরম্ব অল্প একটু কারণ পেল। তাই এক নিশ্বাসে পান করে আবার চুপি চুপি ঘরের শিকল তুলে নিজের ঘরে ফিরে গেল । কিন্তু মালতীর কারণে নেশা আছে, নিদ্রা নেই। হেরম্বের অবসাদ একটু কমল, ঘুম এল না। বিছানায় বসে জানাল দিয়ে সে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। এমন সময় শোনা গেল মালতীর ডাক । হেরম্ব এবং আনন্দ দু’জনের নাম ধরে সে গলা ফাটিয়ে চীৎকার করছে। দু’জনে তারা প্ৰায় একসঙ্গেই মালতীর ঘরে প্রবেশ করল। অনাথের প্ৰায় আসবাবশূন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরখানা মালতী এক বেলাতেই নোংরা করে ফেলেছে । সমস্ত মেঝেতে কাদামাখা পায়ের শুকনো ছাপ, এক কোণে অভুক্ত আহাৰ্য্য, এখানে-ওখানে ফলের খোসা ও আমের আঁাটি । একটি মাটির পাত্র ভেঙ্গে কারণের স্রোত নর্দমা পৰ্য্যন্ত গিয়েছিল, এখনো সেখানে খানিকটা জমা হয়ে আছে। ঘরে তীব্ৰ গন্ধ । কিন্তু মালতীকে দেখেই বোঝা গেল বেশী কারণ সে খায় নি। তার দৃষ্টি অনেকটা স্বাভাবিক, কথাও স্পষ্ট।