পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবরাত্রির কাব্য by ভৰ্ত্তি করা হয়েছে। সমস্ত বাগান জুড়ে গাছের নিবিড় ছায়া আর অস্বাভাবিক স্তব্ধতা । কাঠের ভগ্নপ্রায় গেটটি খুলে অনাথ বাগানে প্ৰবেশ করল। তাকে অনুসরণ করে বাগানের মধ্যে প্ৰথম পদক্ষেপের সঙ্গে হেরম্বের মনে হল এ যেন একটা পরিবর্তন, একটা অকস্মাৎ সংঘটিত বৈচিত্ৰ্য । মানুষের অশান্ত কলরব ভরা পৃথিবীতে, ভাঙ্গা প্রাচীরের আবেষ্টনীর মধ্যে এমন সংক্ষিপ্ত একটি স্থানে এই মৌলিক শান্ত আবহাওয়াটি অক্ষুন্ন থাকা হরম্বের কাছে বিস্ময়ের মত প্ৰতিভাত হল । বাগানের সরু পথটি ধরে একে বেঁকে এগিয়ে গাছের পর্দা পার হয়ে তারা দাড়াল । এখানে খানিকটা স্থান একেবারে কঁকা। সামনে সেই পথ থেকে দেখা মন্দির। মন্দিরের দক্ষিণে অল্প তফাতে পুরানো একটি ইটের বাড়ী। মন্দির আর বাড়ী দুই-ই নোন-ধরা । মন্দিরের দরজা বন্ধ । দরজার সামনে ফাটল ধরা চত্বরে গরদের সাড়ী পরা স্কুলাঙ্গী একটি রমণী বসেছিল। যৌবন তার যাব যাব করছে। কিন্তু গায়ের রঙ এখনো অসাধারণ উজ্জল । চেহারা জমকালো, গম্ভীর। ‘কাকে আনলে গা ? অতিথি নাকি ?” শ্লেষ্মা জড়িত চাপা গলা । হেরম্ব একটু অভিভূত হয়ে পড়ল। অনাথ বলল, “হয়ত চিনতে পারবে মালতী । কলকাতায় তোমাদের বাড়ীর পাশে থাকত। নাম হেরম্ব । মুধুপুরেও একবার দেখেছিলো।” মালতী বলল, “চিনেছি। তা, ওকে আবার ধরে আনার কি দরকার ছিল ! যাক, এনেছ যখন, কি আর হবে ? বোস বাছা । আহা, সিড়িতেই বোস না, মন্দিরের সিড়ি পবিত্র । কাপড় ময়লা হবার ভয়