পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়ে পড়বে যে তারা আর পূর্ব্ব-এশিয়ায় জাপানকে কখনও পরাজিত করতে পারবে না। ইতিহাস পুনরায় এই কথা প্রমাণ করবে, কোন বড় যুদ্ধে দুই রণাঙ্গণে যুদ্ধ করা আত্মহত্যারই সামিল।

 বৃটিশ প্রচারকদের মতে ইঙ্গ-মার্কিণ বিজয়ের ভিত্তি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত বিরাট যুদ্ধ-পণ্য উৎপাদনের আয়োজন। কিন্তু আমরা যখন মার্কিণ যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদন বিশ্লেষণ করি, তখন দেখতে পাই যে তার একটা সীমা আছে। মার্কিণ পণ্যোৎপাদন শেষ সীমায় পৌঁছেচে; ভবিষ্যতে বৃদ্ধির পরিবর্ত্তে তা হ্রাস হতে সুরু করবে। জাপান সম্বন্ধে বলতে গেলে—সে যা আয়োজন করেছে এবং ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে তাতে ভবিষ্যতে জাপানের পণ্যোৎপাদন বাড়বে—এ প্রত্যাশা নির্ভয়ে করা যায়। কেউ যদি একথা অবিশ্বাস করেন, তবে তিনি ভবিষ্যতে কি ঘটে না ঘটে তা দেখবার জন্যে অপেক্ষা করে থাকুন।

 এখন বাকি রইল মার্কিণ মনোবলের প্রশ্ন। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, আজ মার্কিণ মনোবল বৃটিশ মনোবলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। কিন্তু সে উচ্চতা কতদিন থাকবে? যদি প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট “প্রশান্ত মহাসাগর প্রথম” নীতি অবলম্বন করতেন এবং তার দ্বারা বর্ত্তমান যুদ্ধকে জনপ্রিয় জাতীয় যুদ্ধে পরিণত করতেন, তবে বহুদিন পর্য্যন্ত— এমন কি সাময়িক পরাজয় ও বিপর্য্যয় সত্ত্বেও—সে মনোবলকে উঁচুতে তুলে রাখা যেত। ইউরোপীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে মার্কিণ উৎসাহকে চুড়ান্তরূপে সঞ্জীবিত করা সম্ভব নয়—এ প্রশ্ন ছেড়ে দিলেও আর একটি অবিসংবাদিত প্রশ্ন থেকে যায় যে, জাপান এবং জার্ম্মানি যেমন নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে লড়াই করছে, বৃটেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র তা করছে না। তারা যুদ্ধ করছে বিশ্ব-কর্ত্তৃত্বের জন্যে—বৃটেন চায় ভবিষ্যতে কর্ত্তৃত্ব রক্ষা করতে, আর আমেরিকা চায় ভবিষ্যতে কর্ত্তৃত্ব অর্জ্জন করতে। কাজেই বেশী দিন মনোবল অক্ষুন্ন রাখা আমেরিকানদের

৮৬