পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পক্ষে অসম্ভব হবে। কেবল উৎপাদন জাতির মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে না। যদি সমর-সজ্জার প্রাচুর্য্যই বিজয়ের কারণ হত, তবে এ যুদ্ধে জার্ম্মানির হাতে ফ্রান্সের পরাজয় হত না। সুতরাং ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব, ইউরোপীয় রণাঙ্গনে আমেরিকার ক্ষতি যত বাড়তে থাকবে, আমেরিকার শক্তি ও মনোবল তত ক্ষুণ্ণ হবে। তারপরে যদি ইঙ্গ-মার্কিণরা তাদের সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য পূর্ব্ব-এশিয়ায় নিয়োগ করার চেষ্টা করে, তবে তারা জাপানের পক্ষে বিশেষ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ইঙ্গ-মার্কিণরা ইউরোপের যুদ্ধ জয় করতে পারুক বা নাই পারুক, তার সঙ্গে আমার এ উক্তির সম্পর্ক নেই। আর ইঙ্গ-মার্কিণের পক্ষে ইউরোপের যুদ্ধ-জয়ের সম্ভাবনা কতটা আছে বা না আছে, সে প্রশ্নের উত্তর আমি পূর্ব্বেই দিয়েছি।

 পূর্ব্ব-এশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী এবং কঠোর হবে—জাপানের চেয়ে অন্য কেউ সে কথা বেশী করে জানে না। বৃটেন ও মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র-ধারণের পূর্ব্বে জাপান সর্ব্বপ্রকার সম্ভাবনা গণনা করে রেখেছে, এবং প্রয়োজনীয় আয়োজনও সমাপ্ত করা হয়েছে। যুদ্ধারম্ভের পর থেকে জাপান পূর্ব্ব-এশিয়ায় তার অবস্থান দৃঢ়তর করেছে এবং নিজের যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদনও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। জাপানী জাতি ও জাপানী সেনাবাহিনীর মনোবলও বহু গুণ বেড়ে গেছে। কাজেই ভবিষ্যতে আমি মার্কিণ-যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জাপানকে পরাজিত করার কোনই সম্ভাবনা দেখি না। সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকানরা কিছু সাফল্য লাভ করেছে; জাপানের অধিকৃত কিংবা নিয়ন্ত্রনাধীন কয়েকটি দ্বীপও তারা অধিকার করতে পেরেছে। কিন্তু এ দ্বীপগুলি রক্ষা-ব্যূহের বহির্বৃত্তে পড়ে। অন্তর্বৃত্ত—যার নাম দিতে পারি লৌহ-চক্র—এখনও জাপানীদের হাতে আছে এবং থাকবেও। এই লৌহ-চক্রে আমেরিকানরা কখনও প্রবেশ করতে পারবে না। আমেরিকানরা বহির্বৃত্তে কামড়

৮৭