পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে মনে বোঝে যে ভারত আয়র্ল্যাণ্ডের পথই অনুমোদন করবে এবং ভারতকে যা-কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে ভবিষ্যতে সে তা আরও ভালভাবে বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যে নিয়োগ করবে। কাজেই যতদিন সম্ভব ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলন দমন করাই বৃটিশদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ। সত্যাগ্রহ দৈহিক দিক থেকে ভারতে বৃটিশ-শাসনের অবসান ঘটাতে পারে না, কিংবা বৃটিশদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতেও পারে না। সত্যাগ্রহ শুধু শান্তির পথে বৃটিশের সঙ্গে সম্মানজনক অপোষ রফার মারফৎ স্বাধীনতা আনতে পারে। কিন্তু বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ পশুশক্তির সাহায্যে সত্যাগ্রহ-আন্দোলন দমন করতে কৃতসংকল্প হওয়ায় তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই ভারতের মুক্তিকামীর পক্ষে সংগ্রামের ঐতিহাসিক-পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া গত্যন্তর নাই। এই ভাবে আমরা চতুর্থ এবং শেষ অপরিহার্য পথে এসে পড়লাম— স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে অস্ত্র-গ্রহণ।

 ভারতীয় জনগণের একটা বৃহৎ অংশ—বিশেষ করে ভারতীয় যুবসমাজ—এ সম্বন্ধে সজাগ। এই জন্যেই গত চল্লিশ বৎসর ধরে দেশের মধ্যে নানা উত্থান-পতনের ভিতর দিয়ে গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলন চলেছে। এই আন্দোলন উপলক্ষে অস্ত্রাদি সংগৃহীত হয়েছে, এবং বোমা ও অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্য গোপনে প্রস্তুত করা হয়েছে।

 বিপ্লবী আন্দোলনের মারফৎ সত্যাগ্রহ-অন্দোলনের সাহায্যে কিংবা সাহায্য ছাড়া স্বাধীনতা পাবার কি আশা আছে? অতীত ইতিহাসেই এ প্রশ্নের উত্তর মেলে। অসংহত একদল লোক সামান্য অস্ত্রের দ্বারা পশুশক্তির ভিত্তিতে গঠিত এবং পশুশক্তি ব্যবহারে কৃতসংকল্প একটি বিদেশী গবর্নমেণ্টকে উচ্ছেদ করতে পারে না। স্বাধীনতা লাভের জন্যে শুধু অস্ত্রের ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন এবং সেই অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের জন্যে প্রয়োজন আধুনিক বাহিনীর।

৯৭

 দিল্লী—৭