পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পক্ষে এটা মূলীভূত প্রয়োজন। পূর্ব্ব-এশিয়ায় ভারতবাসীরা তাদের চোখের সামনে কয়েক মাসের মধ্যে হংকং থেকে চিন্দুইন নদী পর্য্যন্ত একটা বিরাট সাম্রাজ্যকে উবে যেতে দেখেছে। সেই জন্যেই তারা ভারতে বৃটিশদের পরাজয় এবং উচ্ছেদ সম্বন্ধে এত বেশী আস্থাশীল। ভারতস্থিত আমাদের দেশবাসীর এ অভিজ্ঞতা হয়নি। সেইজন্যেই তাদের মনের কোণে ভীতি আছে যে, ভারতে বৃটিশশক্তি হয়তো এখনও এত বেশী যে তাকে কিছুতে পরাজিত করা যাবে না। বিপ্লব আরম্ভের পূর্ব্বে তাদের মন থেকে আমাদের এই ভ্রান্তি দূর করতে হবে। সেই ভ্রান্তি দূর করার জন্যে এবং ভীতিগ্রস্ত ভারতীয়দের মনে আত্মবিশ্বাস সঞ্চারের জন্যে, আজাদ-হিন্দ ফৌজকে যুদ্ধ করতে হবে এবং রক্তপাত করতে হবে। মালয় এবং ব্রহ্মে যেমন ঘটেছিল তেমনভাবে বৃটিশদের পালাতে বাধ্য করতে পারলে, তবেই আজাদ-হিন্দ ফৌজের প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ সমাপ্ত হবে।

 আজাদ-হিন্দ ফৌজের ঐতিহাসিক ভূমিকায় এটি এক স্মরণযোগ্য ঘটনা—বৃটিশ-সাম্রাজ্যের এক সমাধিভূমিতে—একদা দুর্ভেদ্য দুর্গ সিঙ্গাপুরে এই বাহিনীর সংগঠন হয়েছে। আজাদ-হিন্দ ফৌজ এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে যে, নিয়তি ইতিপূর্ব্বেই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন; আজাদ-হিন্দ ফৌজ সেই দণ্ডদানের ব্যাপারে নিমিত্ত মাত্র।

 প্রশ্ন ওঠে,—আমাদের এ সংগ্রামে জাপানের সাহায্য প্রয়োজনীয় কেন। আয়ার্ল্যাণ্ডে বৃটিশদের পঞ্চাশ হাজার সুশিক্ষিত সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আইরিশ সিনফিন দলের খুব বেশী হলে মাত্র পাঁচ হাজার অনিয়মিত সৈন্য ছিল। ইটালীতে গ্যারিবল্ডী তাঁর সামরিক অভিযান সুরু করেছিলেন মাত্র এক হাজার অসজ্জিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে। তবে আমাদের জাপানের সাহায্য প্রয়োজন হয়েছে কেন?

 এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। যদি ভারতের যুদ্ধপূর্ব্ব বৃটিশ-বাহিনীর

১০০