পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল—হয়তো তখন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার সময় সমাগত হয়নি বলেই।

 এই প্রবীণ নেতার মধ্যে যে বিপ্লবী মনোবৃত্তি ও অনুপ্রেরণা ছিল, আর একটি ঘটনা থেকেও তার প্রমাণ মেলে। যুক্তপ্রদেশে বেরিলির দেওয়ালে দেওয়ালে যে রক্ত-ঘোষণা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে বাহাদুর শাহ্‌ বলেছিলেন:—

 “আমাদের সেনাবাহিনীতে ছোট এবং বড়র ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া হবে; সমতাই হবে নিয়ম। এই পবিত্র যুদ্ধে যারা অস্ত্র-ধারণ করেছে, তারা সবাই সমান গৌরবের অধিকারী। তারা সবাই ভাই ভাই— তাদের মধ্যে পদমর্য্যাদার বিভেদ নেই। ভারতীয় ভ্রাতৃবৃন্দের নিকট আমি আমার নিবেদন জানাচ্ছি—ওঠ, এই দৈবনির্দ্দিষ্ট মহৎ কর্ত্তব্য পালনের জন্যে সংগ্রাম-ক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়।”

 এসব ঘটনার উল্লেখ করে আমি এই কথা প্রমাণ করতে চাই যে, আমাদের এই অজাদ-হিন্দ ফৌজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সুদূর ১৮৫৭ অব্দে। এই শেষ স্বাধীনতা-সংগ্রামে আমাদের সামনে আছে ১৮৫৭ অব্দের প্রথম সংগ্রামের শিক্ষা এবং তার ব্যর্থতার শিক্ষা।

 এবার নিয়তি আমাদের পক্ষে। কয়েকটি রণাঙ্গনে আমাদের বিপক্ষীয়রা জীবন-মরণ সংগ্রামে নিযুক্ত। স্বদেশে আমাদের দেশবাসীরাও সম্পূর্ণ সজাগ। আজাদ-হিন্দ ফৌজের শক্তি অমোঘ; এই সেনাবাহিনীর সকল সদস্য নিজ দেশকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ। পূর্ণ বিজয় লাভ না করা পর্য্যন্ত দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মতো সাধারণ সমর-কৌশল আমাদের আছে। আমাদের ঘাঁটি যথোচিত ভাবে সুসংবদ্ধ। এই বীরকার্যে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্যে রয়েছে মহিমময় বাহাদুর শাহের স্মৃতি এবং আদর্শ। শেষ বিজয় আমাদের হবেই, এতে সন্দেহ থাকতে পারে না।

১১০