পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বারবার আমাদের বিপক্ষপক্ষের মুখে পর্য্যন্ত একথা শুনে এসেছি যে, বর্ত্তমান যুদ্ধ সামগ্রিক যুদ্ধ।

 আজ আপনাদের সম্মুখে ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের উদ্দেশ্যে গঠিত আজাদ-হিন্দ ফৌজের অংশবিশেষ দেখতে পাচ্ছেন। টাউন-হলের সামনে সেদিন এরা এদের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ করেছে। তারপর তারা এই সঙ্কল্প গ্রহণ করেছে যে, পুরানো দিল্লীর লালকেল্লার সামনে গিয়ে যতদিন পর্য্যন্ত তারা বিজয়োৎসবসূচক কুচকাওয়াজ না করতে পারবে, ততদিন পর্য্যন্ত তারা সংগ্রাম থেকে নিরস্ত হবে না। ‘দিল্লী চলো’, ‘দিল্লী চলো’—এই ধ্বনিকে তারা নিজেদের অস্ত্রস্বরূপ গ্রহণ করেছে। বন্ধুগণ, পূর্ব্ব-এশিয়াবাসী তিরিশ লক্ষ ভারতীয়ের কণ্ঠে আজ এই ধ্বনি উঠুক যে, সর্ব্বস্ব ত্যাগ করেও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

 এই সামগ্রিক সমর-সজ্জার জন্যে আমি আশা করছি, আরও অন্ততঃ তিন লক্ষ সৈনিক এবং তিন কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করতে পারব। মৃত্যুবিজয়ী একটি নারীবাহিনীর জন্যে আমি তেজস্বিনী নারীদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনী দেখতে চাই। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁসীর রাণী যে তরবারি ধারণ করেছিলেন, বর্ত্তমান স্বাধীনতা-সংগ্রামে এই নারীবাহিনী সেই তরবারি ধারণ করবেন। বন্ধুগণ, অনেকদিন থেকেই আমরা ইউরোপের দ্বিতীয় ফ্রণ্ট সম্বন্ধে কত কথা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু ভারতে আমাদের দেশবাসীরা চারদিক থেকে নিস্পিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তারা দ্বিতীয় ফ্রণ্টের সাহায্য পাচ্ছে না। পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়েরা আমাকে ধনবল এবং জনবল দিয়ে সর্ব্বাঙ্গীন সাহায্য করুন, আমি আপনাদের দ্বিতীয় ফ্রণ্ট দেখাব, ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের পক্ষে সেটা দ্বিতীয় ফ্রণ্ট হবে।

সিঙ্গাপুর, ১৯৪৩ অব্দের ৯ই জুলাই

১৩