পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বৃটিশ কর্ত্তৃক ভারত-বিজয়ের উপায়গুলির কথা পর্য্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, বৃটিশ ভারতের কোন অংশের সমগ্র জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রয়াসী হয় নি,—তারা একেবারে সমগ্র ভারত বিজয় এবং অধিকার করতে চেষ্টাও করেনি। তারা সামরিক কার্য্যকলাপ আরম্ভ করবার আগে সর্ব্বদাই উৎকোচ ও দুর্নীতির সাহায্যে এক শ্রেণীর লোককে করায়ত্ত করতে সচেষ্ট হয়েছিল। বাংলাতেই এই ব্যাপার ঘটেছিল। সেখানে প্রধান-সেনাপতি মীরজাফরকে বাংলার মসনদ অর্পণ করে বশীভূত করা হয়েছিল। সেই সময় ভারতে ধর্ম্মগত বা সাম্প্রদায়িক সমস্যা কারও জানা ছিল না। বাংলার শেষ স্বাধীন নরপতি সিরাজদ্দৌলা মুসলমান ছিলেন; তাঁর প্রধান সেনাপতি মুসলমান হয়েও তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং হিন্দু সেনাপতি মোহনলালই শেষ পর্য্যন্ত সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। ভারতের ইতিহাসের এই ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষাই লাভ করি যে, বিশ্বাসঘাতকতা রোধ করতে এবং তার শাস্তিবিধান করতে যদি যথাসময়ে ব্যবস্থা অবলম্বিত না হয়, তা হলে কোন জাতিই তার স্বাধীনতা রক্ষা করবার আশা করতে পারে না। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলার এই ঘটনাচক্র যথাসময়ে ভারতীয় জনগণের চোখ ফুটিয়ে দিতে পারে নি। এমন কি সিরাজদ্দৌলার পতনের পরেও যদি ভারতের জনগণ বৃটিশের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হত, তা হলে তারা অনায়াসেই বিদেশীদের ভারতের বুক থেকে বিতাড়িত করতে সমর্থ হত।

 একথা কেউই বলতে পারবে না যে, ভারতের জনগণ তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেনি। কিন্তু তারা সকলে মিলে একতাবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেনি। যখন বৃটিশ ভারত আক্রমণ করল, তখন কেউই তাদের পিছন থেকে আক্রমণ করেনি। পরে যখন বৃটিশ দক্ষিণ-ভারতে টিপুসুলতানের সঙ্গে যুদ্ধরত হল, তখন মধ্য-ভারতের মারাঠারা কিংবা উত্তর-ভারতের