পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি বোঝাতে চাই যে বৃটিশ গবর্নমেণ্টে যদি সত্য সত্যই আপোষরফা করে, তাহলে তারাই জিতবে, ভারতীয় জনসাধারণ হারবে। শুধু একটি ভিত্তিতেই আপোষ সম্ভব—অর্থাৎ ভারতীয় জনগণের একটি গবর্নমেণ্ট গঠন করতে হবে এবং যুদ্ধে বৃটেন ও আমেরিকার সঙ্গে সে গবর্নমেণ্টকে সহযগিতা করতে হবে। এই ভিত্তিতে বৃটিশরা আপোষ করতে পারে এবং করলে তাদের লাভ হবে এবং আমাদের হবে ক্ষতি। কাজেই তত্ত্বের দিক থেকে আপোষরফা সম্ভব এবং সে আপোষ বৃটিশদের পক্ষেই সুবিধাজনক।

 বাস্তব বিচারে কিন্তু আপোষরফা প্রায় অসম্ভব—কেননা ব্রিটিশ ভারতীয় জনসাধারণের হাতে গবর্নমেণ্ট তুলে দিতে যাবে না। কয়েকজন ভারতীয় নেতা আছেন যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় গবর্নমেণ্ট গঠন করতে পারলে আপোষরফা করে বৃটেনের যুদ্ধে সহযোগিতা করতে রাজী। কিন্তু বৃটিশরা ভারতীয় জনসাধারণকে বিশ্বাস করে তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না—কেননা বৃটেনের সব সময় সন্দেহ, ক্ষমতা হাতে পেয়ে ভারতীয়রা যদি সাহায্য করতে অস্বীকার করে? কাজেই বাস্তব আপোষরফা প্রায় অসম্ভব।

 সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমার মতে আপোষরফার কোন সম্ভাবনা নেই। একমাত্র যে প্রশ্ন বাকী থাকে—সেটা হচ্ছে, মহাত্মা গান্ধী কিংবা অন্য কোন প্রধান কংগ্রেস নেতা বৃটিশ গবর্নমেণ্টের কাছে বিনাসর্ত্তে আত্মসমর্পণ করে “ভারত ছাড়ো” প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন কিনা। এ সম্বন্ধে এ পর্য্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর মনোভাবে দুর্ব্বলতার সামান্য লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তাঁর বার্দ্ধক্য এবং চরম দুর্ব্বল স্বাস্থ্য সত্ত্বেও, তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে কিছুমাত্র দুর্ব্বলতার লক্ষণ নেই। অপর পক্ষে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বৃটিশ গবর্নমেণ্টের যেসব পত্রালাপ হয়েছিল, তারা সে সব প্রকাশ করার জন্যে অতিমাত্রায় উৎসুক। আমার মতে এর অর্থ,

৪৩