পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগঠন আমাদের বিপক্ষদলের পক্ষে বিষম আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল। তারা কিছুকাল এর অস্তিত্বকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখন সংবাদ আর চেপে রাখা গেল না, তখন তারা নয়াদিল্লীর ভারত-বিরােধী বেতার কেন্দ্রের মারফৎ এই মর্ম্মে প্রচার শুরু করল যে, জাপানের নিয়ন্ত্রণাধীনে ভারতীয় বুদ্ধবন্দীরা জাপানী সেনাবাহিনীতে যােগ দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এ প্রচারও বেশী দিন কার্য্যকরী হল না—কারণ ভারতে নানাসূত্রে সংবাদ যেতে লাগল যে, পূর্ব্ব-এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু অসামরিক ভারতবাসী আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দিচ্ছে। ভারত-বিরােধী রেডিওর বিশেষজ্ঞদেরও প্রচার-কৌশল পালটাতে হল। তারা তখন এই মর্ম্মে নতুন প্রচার শুরু করল, ভারতীয় যুদ্ধ বন্দীরা আজাদ হিন্দ ফৌজে যােগ দিতে অস্বীকৃত রূয়েছে বলেই বেসামরিক ভারতীয়দের যােগ দিতে বাধ্য করানাে হয়েছে। দিল্লীর সবজান্তাদের মাথায় এ বুদ্ধি জোগায় নি যে, যুদ্ধবন্দীদের উপর বলপ্রয়ােগ করে যদি তাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য না করা যায়, তবে স্বাধীন বেসামরিক অধিবাসীদের জোর করে সৈন্যদলে ভর্ত্তি করানাে আরও কঠিন। কিন্তু আমাদের বিপক্ষীয় প্রচারকদের এরূপ মূর্খতা বিস্ময়কর নয়— নিজের বিবেক যদি দুষ্ট হয় কিংবা কোন দুর্ব্বল বিষয়কে যদি সমর্থন করতে হয়, তবে পরস্পর-বিরােধী যুক্তি না দিয়ে উপায় থাকে না। যাই হােক, আজ আমি ঘােষণা করছি যে, বৃটিশ-ভারতীয় বাহিনীর ভূতপূর্ব্ব সদস্য এবং পূর্ব্ব-এশিয়ার অসামরিক ভারতীয়দের নিয়ে ভারতের মুক্তি-ফৌজ গঠিত হয়েছে।

 যার সামান্য সাধারণ বুদ্ধি আছে সেও বুঝবে, জোর করে ভাড়াটে বাহিনী গড়ে তােলা সম্ভব হলেও জোর করে স্বেচ্ছাসৈনিকদের বাহিনী গড়ে তােলা যায়না। কোন লােকের ঘাড়ে আপনি জোর

৪৬