পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে করিয়ে দিয়েছি যে, ভারত-সীমান্ত অতিক্রমের পরই প্রকৃত যুদ্ধ আরম্ভ হবে; সে যুদ্ধ হবে কঠিন এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমি তাঁদের আরও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, ভারতের মাটিতেই বৃটিশরা প্রথম এবং শেষবারের মতো পুরুষের ন্যায় যুদ্ধ করবে। কারণ তারা জানে যে, ভারত হাত-ছাড়া হওয়া মানেই বৃটিশ সাম্রাজ্যের মৃত্যু। কাজেই আমরা দীর্ঘ এবং কঠিন যুদ্ধের জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দিল্লী অভিযান খুব সহজ হবে না। এযুদ্ধ হবে ইতিহাসের অন্যতম কঠিন যুদ্ধ—তবে শেষ বিজয়লাভ করব আমরাই। নয়া দিল্লীতে বড়লাটের প্রাসাদের উপর ত্রিবর্ণ-পতাকা উড্ডীন দেখার পূর্ব্বে আমাদের যদি আরও বারো মাস কিংবা চব্বিশ মাস পর্য্যন্তও যুদ্ধ করতে হয়, তবু বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

 আমি ইতিপূর্ব্বেই বলেছি, সেনাবাহিনীর লোক এবং অসামরিক অধিবাসীদের নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়েছে। এ বাহিনী শুধু পুরুষদের নিয়েই গঠিত নয়, এ বাহিনীতে নারী-সৈন্যও আছে। আজ ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের বাহিনীর পুরুষরাই লড়াই করছে—কিন্তু এমন দিন শীঘ্রই আসবে যখন আমাদের নারী-সৈনিকরা, ঝাঁসীর রানী বাহিনীর আমাদের কমরেডরা—পুরুষদের সঙ্গে পাশাপাশি রণাঙ্গণে যাবে। আমাদের বাহিনীতে নতুন সৈন্য সংগ্রহেরও অভাব নেই। কার্য্যত সুরু থেকেই এত নতুন সৈন্য আসতে শুরু করেছে যে, আমরা তাদের সবায়ের শিক্ষা-ব্যবস্থা করে উঠতে পারিনি। এবং আমি যতদূর দেখতে পাই, তাতে মনে হয় যে যুদ্ধ যতদিন থাকবে, ততদিন এই রকম নতুন সৈন্য় বহু সংখ্যায় আসতে থাকবে।

 আজাদ হিন্দ ফৌজ শুধু ভারতীয়দের দ্বারা গঠিতই নয়—এ বাহিনীকে শিক্ষাও দিয়েছে ভারতীয়রা। সেই বাহিনী আজ ভারতীয় অফিসারদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করছে। আজাদ হিন্দ ফৌজ সম্বন্ধে ভারতে আমাদের বিপক্ষীয়েরা যে সব মিথ্যা রটনা করেছে, তার কিছু কিছু আমি জানি।

৪৮