পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাইরে এসে ব্রিটেনের নীতি সম্বন্ধে আমি যে গােপন সংবাদ সংগ্রহ করেছি তার থেকে—এবং সমগ্র পৃথিবীতে ব্রিটেনের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের যে চিত্র আমি দেখেছি তার থেকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে, বৃটিশ গবর্নমেণ্ট কখনও ভারতীয়দের স্বাধীনতার দাবী স্বীকার করে নেবে না। এই যুদ্ধ-জয়ের প্রচেষ্টায় আজ ভারতকে পুরােপুরি শােষণ করাই বৃটেনের একমাত্র চেষ্টা। এই যুদ্ধে বৃটেন তার সাম্রাজ্যের একাংশ হারিয়েছে শত্রুদের কাছে, অপরাংশ হারিয়েছে মিত্রদের কাছে। এ যুদ্ধে কোনপ্রকারে মিত্রশক্তি যদি জয়লাভ করেও, তবে ভবিষ্যতে বৃটেন নয়—আমেরিকাই হবে বেশী শক্তিশালী রাষ্ট্র। তার অর্থ, বৃটেন মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষিত রাজ্যে পরিণত হবে। এই পরিস্থিতিতে বৃটেন পূর্ব্বের চেয়েও বেশী নিদারুণ ভাবে ভারত শােষণ করে তার ক্ষতি পরিপূরণ করার চেষ্টা করবে। এই উদ্দেশ্যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চিরদিনের মতাে ধ্বংস করার পরিকল্পনা প্রস্তুত হয়ে গেছে। আমি গােপন অথচ নির্ভরযােগ্য সূত্র থেকে এই সব পরিকল্পনার কথা জেনেছি বলেই এসম্বন্ধে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা আমি কর্ত্তব্য বলে মনে করি। আমাদের পক্ষে বৃটিশ গবর্নমেণ্ট এবং বৃটিশ জনগণকে ভিন্ন করে দেখা মারাত্মক ভুল হবে। এবিষয়ে সন্দেহ নেই যে, মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃটেনেও ক্ষুদ্র একদল আদর্শবাদী আছেন—যাঁরা ভারতকে স্বাধীন দেখতে চান। এই সব আদর্শবাদীকে তাঁদের দেশের লােকেরা মনে করে পাগল; এদের সংখ্যাও নগণ্য। ভারতের ব্যাপারে বাস্তব দিক থেকে বৃটিশ গবর্নমেণ্ট এবং বৃটিশ জনসাধারণ সমার্থবােধক। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধোদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমি বলতে পারি, ওয়াশিংটনের শাসকগােষ্ঠী এখন বিশ্ব-প্রভুত্বের স্বপ্ন দেখছেন। এই শাসকগােষ্ঠী এবং তাঁদের বুদ্ধিবাদী টীকাকাররা খােলাখুলি “মার্কিণ শতাব্দী”র কথা বলেন। অর্থাৎ বর্ত্তমান শতাব্দীতে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে প্রভুত্ব করবে। এই শাসক-