পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহজতম উপায়। যুদ্ধকালের জন্য কোন ভারতীয় কারাগারে বন্দী হয়ে থাকাও আমার পক্ষে সহজ ছিল। তার ফলে ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্ষতি হত না। দেশবাসীর উদারতা এবং স্নেহকে ধন্যবাদ—ভারতীয় কোন জন-সেবকের পক্ষে শ্রেষ্ঠ সম্মান, তাঁরা তাই আমাকে দিয়েছিলেন। একটি রাজনৈনিক দলও আমি গড়েছিলাম; সেই দলে আমার যাঁরা একনিষ্ঠ এবং অনুগত সহকর্ম্মী, তাঁদের গভীর বিশ্বাস ছিল আমার উপরে। বিপজ্জনক সন্ধানে বিদেশে গিয়ে যে আমি শুধু আমার প্রাণ এবং সমগ্র ভবিষ্যৎ জীবনকে বিপদগ্রস্ত করছিলাম তাই নয়, আমার রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎকেও বিপন্ন করছিলাম। বিদেশে না গিয়েও আমরা স্বাধীনতা পেতে পারি—এরকম ক্ষীণতম আশা যদি মনে পেতাম, সঙ্কট-মুহূর্ত্তে আমি কখনও ভারত ছেড়ে আসতাম না। আমার জীবিতকালে স্বাধীনতা-লাভের জন্য বর্ত্তমান যুদ্ধের মতো আর একটি সুযোগ—আর একটি সুবর্ণসুযোগ পাব, এরূপ কোন আশা যদি আমার মনে থাকত, আমি গৃহত্যাগ করে আসতাম না। দুটি বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল; প্রথমতঃ আগামী এক শতাব্দীর মধ্যে আর এরূপ সুবর্ণসুযোগ আসবে না, দ্বিতীয়তঃ, বিদেশ থেকে চেষ্টা না করলে শুধু দেশে বসে নিজেদের চেষ্টায় আমরা স্বাধীনতা অর্জ্জন করতে পারব না। সেই জন্যেই আমি বিপদে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে ইতস্তত করিনি।

 ঈশ্বর আমার প্রতি সদয়। নানা রকম অসুবিধা সত্ত্বেও এ পর্য্যন্ত আমার সব পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে। ভারত থেকে বেরিয়ে আসার পর বিদেশে যেখানেই দেশবাসীদের সাক্ষাৎ পেয়েছি, সেখানেই তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করা আমার কাজ হল। আমি সানন্দে জানাছি সর্ব্বত্রই আমি তাদের পূর্ণ-সচেতন দেখেছি—ভারতের স্বাধীনতার জন্যে তারা সম্ভবপর সব কিছু করতে প্রস্তুত। মিত্র পক্ষীয়দের সঙ্গে সংগ্রামরত গবর্নমেণ্টগুলির

৫৯