পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মধ্যে ছিল, প্রত্যেক রণাঙ্গনে তারা পরাজয়ের পর পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। তখন তারা নিজের জনগণের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার জন্যে প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছিল। সেই সময় তারা রোজই মার্কিণ সমরায়োজনের কথা বলত; মার্কিণ সমরায়োজন ও আর্থিক সংস্থান বৃটেনকে যুদ্ধ-জয়ে সাহায্য করবে এই বিশ্বাস উৎপাদনের জন্যে অবাস্তব সংখ্যার প্রচার করত। ভারতের উদ্দেশ্যে তাদের প্রচারকার্য্যে বৃটিশরা অনবরত যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের কথা বলত, কমিটি গঠন করত এবং সে উদ্দেশ্যে অর্থাদিও রেখে দিত—যাতে ভারতীয় জনগণের মনে ধারণা জন্মে যে, বৃটিশরা যুদ্ধজয় সম্বন্ধে স্থির বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণোদ্যমে যুদ্ধে যোগ না দেওয়া পর্য্যন্ত প্রচারে বিশেষ কিছু কাজ হয় নি। তারপর থেকে ইউরোপে অন্ততঃ যুদ্ধের হাওয়া কিছুটা মিত্রপক্ষের অনুকূলে বইতে শুরু করেছে। কিন্তু, ইউরোপে মিত্রশক্তির সাম্প্রতিক সাফল্যকে যদি সযত্নে বিশ্লেষণ করা যায়, দেখা যাবে এসব সাফল্যের অধিকাংশই আমেরিকার সমর-সামর্থ্যের দরুণ। আজ যদি মিত্রপক্ষীয় মনোবল দু-বছর আগেকার চেয়ে উচ্চতর হয়ে থাকে, তবে তা-ও সম্পূর্ণভাবে কিংবা প্রধানতঃ হয়েছে মার্কিণ যুক্তরাষ্টের কার্য্যকারিতার দরুণ। স্বতন্ত্র ভাবে বিবেচনা করলে, বৃটিশ মনোবল আজও অনেক কম। এই জন্যেই বৃটেনের প্রধান মন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। প্রত্যেক রণাঙ্গণেই উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী মিঃ উইনস্টন চার্চ্চিল আমেরিকান সেনাধ্যক্ষদের মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন;—দাবী ওঠা মাত্র আমেরিকার কাছে বহু মূল্যবান বৃটিশ অঞ্চল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন—এমন কি যাকে নিজের রাজ্যের অধিকার ছেড়ে দেওয়া (extra-territorial right) বলে, আমেরিকাকে তাও দিতে হয়েছে। আরও মজার ব্যাপার এই যে, মিঃ চার্চ্চিলের পশ্চাদ্‌বর্ত্তী শাসক-গোষ্ঠী এবং তাঁদের মতের উপাসক ও

৭৩