পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিপোষক বুদ্ধিবাদীরাও খোলাখুলি আমেরিকানদের “মার্কিন শতাব্দীর” মতবাদ স্বীকার করে নিচ্ছেন। অন্য ভাবে বলতে গেলে তাঁরা স্পষ্ট স্বীকার করেন যে, বৃহত্তর রাষ্ট্র হিসাবে মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে বৃটেনকে স্থান ছেড়ে দিতে হবে এবং এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে আমেরিকার সাহায্য কিংবা সম্মতির সুযোগে বৃটেন তার সাম্রাজ্যের যতখানি পারে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। বৃটেন যে ভারতকে কোন সুযোগ দিতে চায় না কিংবা ভারতের স্বাধীনতা দাবীর প্রশ্নে আমেরিকা যে বৃটেনের উপর চাপ দিতে অনিচ্ছুক—তার মূল কারণ এর মধ্যেই নিহিত। বৃটেনের স্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধশেষে ভারতকে আরও শোষণ করা এবং এইভাবে অন্ততঃ আংশিক ভাবে তার বর্ত্তমান ক্ষতির পরিপূরণ করা। এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধশেষে চিরদিনের মতো ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনকে নিষ্পেষিত করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই লণ্ডনে রচিত হয়েছে। বৃটিশ রাজনীতিবিদ্‌রা বোঝেন যে তাঁরা এপর্য্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনকে দমন করতে পারেননি। এপর্য্যন্ত অনুসৃত ভেদনীতির শাসন এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে হেয় করার জন্যে দেশীয় নৃপতি, মুসলমান এবং তথাকথিত তপশীলী শ্রেণীর প্রতি পার্থক্যময় ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের ধরণে ভারতীয় প্রশ্ন-সমাধানের যে ব্যবস্থা বৃটিশ রাজনীতিবিদরা করে রেখেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকারের। এসম্বন্ধে আমি অন্য কোনদিন বলব।

 ১৯৪২-এর নবেম্বর থেকে প্রায় সম্পূর্ণতর আমেরিকার সাহায্য ও হস্তক্ষেপের দরুণই এবং আমেরিকার কূটনীতির ফলে মিত্রপক্ষ উত্তরআফ্রিকায় ও পরে ইটালীতে সাফল্য লাভ করতে পেরেছে। আমেরিকার কূটনীতির খেলা সার্থক না হলে ফ্রান্সের অ্যাডমিরাল দাঁর্লার দল মিত্রপক্ষে যোগ দিত না। এবং দাঁর্লার সাহায্য ছাড়া উত্তর-আফ্রিকার যুদ্ধে মিত্রপক্ষের জয়লাভ করা সম্ভব হত কিনা— সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের

৭৪