পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মূলক হিসাবে কম। তা সত্ত্বেও ইউরোপে আমেরিকা-বাহিনীর যতদিন রণক্লান্তি না আসে, ততদিন মিত্রপক্ষের মনোবল অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু সে কতদিন? সরকারী হিসাব থেকে দেখা যায়, এ যুদ্ধে আমেরিকার ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিগত যুদ্ধে তার ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য লোকসংখ্যা প্রচুর—তবে আমাদের একথা ভুললে চলবে না, আমেরিকানরা যুদ্ধপ্রিয় জাতি নয়। তারা হচ্ছে ব্যবসায়ী ও কৃষকের জাতি। ইউরোপের যুদ্ধ আমেরিকা থেকে বহু দূরবর্ত্তী; আমেরিকার সমগ্র জাতির কাছে এ যুদ্ধ জনপ্রিয় নয়। ইউরোপের যুদ্ধ বিষয়ে যারা সব চেয়ে উৎসাহী, তারা হচ্ছে প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্টের অনুরক্ত সমর্থক—ইহুদীরা এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মহল। তারা সমগ্র পৃথিবীর উপর অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে। প্রভাবশালী স্বাতন্ত্র্যবাদী দল ইউরোপীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে উদাসীন—যদিও প্রশান্ত মহাসাগরের যুদ্ধ সম্বন্ধে তারা উৎসাহশীল। তাছাড়া, ইউরোপীয় রণাঙ্গন ত্যাগ করে প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তি সন্নিবদ্ধ করার একটা অবিচ্ছিন্ন পৌনঃপুনিক দাবী মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে শোনা যাচ্ছে। কাজেই যুদ্ধে মার্কিণ ক্ষতির পরিমাণ যতই বাড়বে, ততই প্রতিবাদ শুরু হবে এবং রণক্লান্তিও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া, সমর-কৌশলের দিক থেকে সরবরাহের অঞ্চল যত বিস্তৃততর হবে, ততই অতিরিক্ত অসুবিধার সৃষ্টি হবে; এখন আমেরিকানরা যে অসুবিধা ভোগ করছে নতুন সমস্যা দেখা দিলে তার পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যাবে। আমেরিকানরা যখনই রণক্লান্তি দেখাবে, তখনই তাদের পতনের শুরু হবে এবং ইউরোপে ইঙ্গ-মার্কিণ পরাজয়েরও সূত্রপাত হবে।

 অতঃপর সোভিয়েট রাশিয়ার প্রশ্ন। সোভিয়েট কি জার্ম্মাণীতে প্রবেশ করে যুদ্ধের গতি ফেরাতে পারবে? মিত্রপক্ষের প্রচারকদের সদম্ভ প্রচারানুযায়ী তারা কি সত্যিসত্যি বার্লিনে প্রবেশ করতে পারবে? এ

৭৭