পাতা:দুই বাড়ি - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জায়গায় কথা বুঝিতে পারা যায় না-কি লইয়া গান-তাহাও বুেঝা যায় না। শ্যামা-বিষয় বা রামপ্রসাদী গান নয়। দেহতত্ত্বও নয়। অবিশিষ্ঠ এতটুকু মেয়ের মুখে দেহতত্ত্বের গান ভালোও লাগিত না । শুনিতে শুনিতে নিধুর মায়ের মনে হইল—তিনি যেন কোথায় মেঘলোকে চলিয়া যাইতেছেন উড়িয়া। সেখানে যেন বাল্যকালে তঁহার বাপের বাড়িতে যেমন ফান্তন-চৈত্র মাসে শুকনো ধুৱফুলের উড়ন্ত পাপড়ি ধরিয়া আনন্দ পাইতেন-বাবুর-হাটের সেই পুকুরের ধারে, সেই ফুলগাছতলায় বসিয়া বারো বছরের বালিকাটির মতো আবার ধুৱফুলের পাপড়ি ধরিতেছেন-আবার সেই আনন্দভরা বাল্যকাল তঁহার স্নেহময় পিতাকে লইয়া ফিরিয়াছে, যে পিতার মুখ মনের মধ্যে স্পষ্ট হইয়া এখন আর ফোটে না । কথাবার্তাও অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে । নিজের অজ্ঞাতসারে কখন নিধুর মা’র চোখে জল আসিয়া গেল। ইতিমধ্যে হারমোনিয়মের আওয়াজ পাইয়া পাড়ার আরও অনেকগুলি ছোট ছােট ছেলেমেয়ে ছুটিয়া আসিয়াছিল; কিন্তু তাহারা বাড়ির মধ্যে ঢুকিতে সাহস না করিয়া দরজার সামনে ভিড় করিতেছে দেখিয়া ময়ু বীরেনকে বলিল-দাদা, ওদের ডেকে নিয়ে এস বাড়ির মধ্যেনিধুও মুগ্ধ। মঞ্জুর মুখের গান শুনিয়া তাহার মনে হইল এ এমন এক ধরনের জীবন, যাহার মধ্যে সে এই প্ৰথম প্ৰবেশ করিল। জীবনে এত ভালো জিনিসও আছে! শুধু সাক্ষী দেখানো, কেস সাজানো, যদুমোক্তারের ব্যবসার সম্বন্ধে উপদেশ-মক্কেল ও হাকিমকে তুষ্ট রাখিবার নানা কলাকৌশল সম্বন্ধে বক্তৃত-বাড়ির দারিদ্র্য, অভাব অভিযোগ-এ সবের উধেবও এমন জগৎ আছে-আকাশ যেখানে নীল, সুৰ্যোদয় অরুণরাগারক্ত, সারাদিনমান বিহঙ্গ কাকলীমুখর। যেখানে উদ্বেগ নাই, গাউনপরা উকীল-মোক্তারের ভিড় নাই, হাকিমদের গম্ভীর গলার O