পাতা:দুই বাড়ি - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিধুবুদ্ধিমান লোক, সে কথাটা ভালো করিয়া ভাবিল। মঞ্জুর প্রতি তাহার মনোভাব এমন হওয়ার হেতু কি ? মধু সুন্দরী মেয়ে, কিন্তু সুন্দরী সে একেবারে দেখে নাই তাহা তো নয়, সেজন্যে সে আকৃষ্ট হয় নাই। তাহাকে আকৃষ্ট করিয়াছে—তাহার প্রতি মঞ্জুর সদয় ও মধুর ব্যবহার, মঞ্জুর আদর, সৌজন্য-অত বড়লোকের মেয়ে সে, শিক্ষিতা ও রূপসী, তাহার উপর এত দরদ কেন তার ? এ এমন একটা জিনিস-নিধুর জীবনে যাহা আর কখনো ঘটে নাই, একেবারে প্রথম। তাই মঞ্জুর কথা ভাবিলেই, তাহার মুখ মনে করিলেই নিধুর মন মাতিয়া ওঠে-তাহাকে উদাস ও অন্যমনস্ক করিয়া তোলেসব কিছু তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। অথচ ইহার পরিণাম কি ? শুধু কষ্ট ছাড়া ? বুদ্ধিমান নিধু সে কথাও ভাবিয়া দেখিয়াছে। মঞ্জুকে সে চায় কিন্তু মঞ্জুর বাবা কি কখনো তাহার সহিত মঞ্জুর বিবাহ দিবেন ? মধুকে পাইবার কোনো উপায় নাই তাহার। মঞ্জুকে আশা করা: তাহার পক্ষে বামন হইয়া চাদে হাত দিবার সমান। কেন এমন হইল তাহার মনের অবস্থা ? অত্যন্ত ইচ্ছা হয়, মঞ্জুর মনের ভাব কি জানিতে। মধুও কি তাহাকে এমন করিয়া ভাবিতেছে ? একথা কিন্তু মনে-প্ৰাণে বিশ্বাস করা শক্ত । কি তাহার আছে, না রূপ, না গুণ, না। অর্থ-মঞ্জু তাহার কথা কেন ভাবিবে ? সে গরিবের ছেলে, মোক্তারী করিতে আসিয়া পাচটাকা ঘরভাড়া দিয়া নিজে দুটি রাধিয়া খাইয়া। মক্কেল শিখাইয়া, যদু-মোক্তারের দয়ায় জামিননামা সই করিয়া গড়ে মাসে আঠারো-উনিশ টাকা রোজগার করে-কোনো সন্ত্রান্ত ঘরের শিক্ষিতা মেয়ে যে তাহার মতো লোকের দিকে চাহিয়া দেখিতেও পারে-ইহা বিশ্বাস করা শক্ত ।