পাতা:দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই বোন
১৫

 শশাঙ্ক হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললে, “পরের হাতের আপদও একই জাতের দুষমন।”

 একদিন কোন্ মেরামতের কাজ তদন্ত করতে গিয়ে জুতো ফুঁড়ে পায়ে ফুটল ভাঙা প্যাকবাক্সর পেরেক, হাসপাতালে গিয়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ধনুষ্টংকারের টিকে নিলে, সেদিন কান্নাকাটি করলে শর্মিলা, বললে, “কিছুদিন থাকো শুয়ে।”

 শশাঙ্ক অত্যন্ত সংক্ষেপে বললে “কাজ।” এর চেয়ে বাক্য আর সংক্ষেপ করা যায় না।

 শর্মিলা বললে, “কিন্তু”—এবার বিনা বাক্যেই ব্যাণ্ডেজ সুদ্ধ চলে গেল কাজে।

 জোর খাটাতে আর সাহস হয় না। আপন ক্ষেত্রে পুরুষের জোর দেখা দিয়েছে। যুক্তিতর্ক কাকুতিমিনতির বাইরে একটিমাত্র কথা, “কাজ আছে।” শর্মিলা অকারণে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে থাকে। দেরি হোলেই ভাবে মোটরে বিপদ ঘটেছে। রোদ্দুর লাগিয়ে স্বামীর মুখ যখন দেখে রক্তবর্ণ, মনে করে নিশ্চয় ইনফ্লুয়েঞ্জা। ভয়ে ভয়ে আভাস দেয় ডাক্তারের— স্বামীর ভাবখানা দেখে ঐখানেই থেমে যায়। মন খুলে উদ্বেগ প্রকাশ করতেও আজকাল ভরসা হয় না।