অভ্যাসে দাড়িয়েছে। এক-পা ধুলো ও এক-গা ক্লান্তি নিয়ে যখন বাড়ী এসে পৌছোয়, মা তার মুখের দিকে চেয়ে করুণায় বিগলিত হয়ে বলেন: এত কষ্ট করবার কি দরকার—তা ছাড়া মাঝে মাঝে ট্রামে গেলেও তো পারো।
রমু হেসে হাত-পা ধুয়ে পড়তে চলে যায়।
পড়তে পড়তে সারাদিনের অসীম ক্লান্তিতে যখন ঢুলতে সুরু করে —তার মাঝে সে দেখতে পায়—ময়দানের খেলোয়াড়দের—আর দেখতে পায় শিয়ালদা স্টেশনের বাইরের রাস্তার উপর অসংখ্য বাস্তুত্যাগীর ভিড়ের মধ্যে সেই হৃষ্টপুষ্ট ছেলেটি যে প্রত্যেক দিন এসে তার কাছে অনেক খবর জানতে চায়—শুধু সে জানতে চায় তাই নয়, রমুও তাদের দেশের সব খবর জানতে চায়।
রমুর এই ছোট বন্ধুটি যখন তাদের দেশের কথা বলতে থাকে তখন তার নিষ্প্রভ চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এই ভাবে দিনের পর দিন তাদের বন্ধুত্ব জমে ওঠে।
রমুর অপেক্ষায় তার বন্ধু অপেক্ষা করে থাকে। গল্প শুনতে শুনতে কতদিন যে রমুর দেরী হয়ে যায়—তার ঠিকানা নেই-বকুনিও খেতে হয় বৈকি।
দিন চলে যায়—রমুর বন্ধু নীলু একদিন খবর দিল—এখান থেকে এবার তারা চলে যাবে, আর হয়তো দেখা হবে না। রমুর মুখ ম্লান হয়ে যায়—জিজ্ঞাসা করে—কবে, কোথায় যাবে? নীলু বলে: জানি তো ভাই—কেবল চলে যেতে হবে তাই শুনেছি। আমি মাকে জিজ্ঞাসা করে তোমায় বলবো।