প্রহরী চরিতার্থ হইয়া বিমলার পাশে বসিল। ক্ষণকাল অন্য কথোপকথনের পর বিমলা দেখিলেন যে, ঔষধ ধরিয়াছে। প্রহরী নিকটে বসিয়া অবধি ঘন ঘন তাঁহার পানে দৃষ্টিপাত করিতেছে। তখন বলিলেন, “সেখজী, তুমি বড় ঘামিতেছ; একবার আমার বন্ধন খুলিয়া দাও যদি, তবে আমি তোমাকে বাতাস করি, পরে, আবার বাঁধিয়া দিও।”
সেখজীর কপালে ঘর্ম্মবিন্দুও ছিল না, কিন্তু বিমলা অবশ্য ঘর্ম্ম না দেখিলে কেন বলিবে? আর এ হাতের বাতাস কার ভাগ্যে ঘটে? এই ভাবিয়া প্রহরী তখনই বন্ধন খুলিয়া দিল।
বিমলা কিয়ৎক্ষণ ওড়না দ্বারা প্রহরীকে বাতাস দিয়া স্বচ্ছনে ওড়না নিজ অঙ্গে পরিধান করিলেন। পুনর্ব্বন্ধনের নামও করিতে প্রহরীর মুখ ফুটিল না। তাহার বিশেষ কারণও ছিল; ওড়নার বন্ধনরজ্জুত্ব দশা ঘুচিয়া যখন তাহা বিমলার অঙ্গে শোভিত হইল, তখন তাঁহার লাবণ্য আরও প্রদীপ্ত হইল; যে লাবণ্য মুকুরে দেখিয়া বিমলা আপনা-আপনি হাসিয়াছিলেন, সেই লাবণ্য দেখিয়া প্রহরী নিস্তব্ধ হইয়া রহিল।
বিমলা কহিলেন, “সেখজী, তোমার স্ত্রী তোমাকে কি ভালবাসে না?”
সেখজী কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেন?”
বিমলা কহিলেন, “ভালবাসিলে এ বসন্তকালে (তখন ঘোর গ্রীষ্ম, বর্ষা আগত) কোন্ প্রাণে তোমা-হেন স্বামীকে ছাড়িয়া আছে?”
সেখজী এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিল।
বিমলার তূণ হইতে অনর্গল অস্ত্র বাহির হইতে লাগিল।