পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
দুর্গেশনন্দিনী

কিন্তু সে ক্ষণকালমাত্র; তেজস্বিনী বুদ্ধির প্রভাবে তখনই মুখ আবার হর্ষোৎফুল্ল হইল। বিমলা মনে মনে কহিলেন, “ইহারই দ্বারা স্বকর্ম্ম উদ্ধার করিব।” তাহার কথার প্রত্যুত্তরে কহিলেন,—“চুপ কর, আস্তে, বাহিরে আইস”—এই বলিয়া বিমলা রহিম সেখের হস্ত ধরিয়া বাহিরে টানিয়া আনিলেন; রহিমও ইচ্ছাপূর্ব্বক আসিল। বিমলা তাকে নির্জ্জনে পাইয়া বলিলেন, “ছি ছি ছি! তােমার এমন কর্ম্ম! আমাকে রাখিয়া তুমি কোথায় গিয়াছিলে? আমি তােমাকে না তল্লাস করিয়াছি এমন স্থান নাই।”

 বিমলা আবার সেই কটাক্ষ সেখ্জীর প্রতি নিক্ষেপ করিলেন।

 সেখ্জীর গোসা দূর হইল; বলিল,—“আমি সেনাপতিকে জগৎসিংহের সংবাদ দিবার জন্য তল্লাস করিয়া বেড়াইতেছিলাম, সেনাপতির নাগাল না পাইয়া, তোমার তল্লাসে ফিরিয়া আসিলাম; তােমাকে ছাদে না দেখিয়া নানা স্থানে তল্লাস করিয়া বেড়াইতেছি।”

 বিমলা কহিলেন,—“আমি তােমার বিলম্ব দেখিয়া মনে করিলাম, তুমি আমাকে ভুলিয়া গেলে; এজন্য তােমার তল্লাসে আসিয়াছিলাম। এখন আর বিলম্বে কাজ কি? তােমাদের দুর্গ অধিকার হইয়াছে; এই সময়ে পলাইবার উদ্যোগ দেখা ভাল।”

 রহিম কহিল, “আজ না, কাল প্রাতে; আমি না বলিয়া কি প্রকারে যাইব? কাল প্রাতে সেনাপতির নিকট বিদায় লইয়া যাইব।”

 বিমণা কহিলেন, “তবে চল, এই বেলা আমার অলঙ্কারাদি যাহা আছে, হস্তগত করিয়া রাখি; নচেৎ আর কোন সিপাহী লুঠ করিয়া লইবে।”