পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে
১০৩

 সৈনিক কহিল, “চল।” রহিমকে সমভিব্যাহারে লইবার তাৎপর্য্য এই যে, সে বিমলাকে অন্য সৈনিকের হস্ত হইতে রক্ষা করিতে পারিবে। বিলার সতর্কতা অচিরাৎ প্রমাণীকৃত হইল! তাহারা কিয়দ্দূর যাইতে না যাইতেই আর একদল অপহরণাসক্ত সেনার সম্মুখে পড়িল। বিমলাকে দেখিবামাত্র তাহারা কোলাহল করিয়া উঠিল— “ওরে বড় শিকার মিলেছে রে!”

 রহিম বলিল,—“আপন আপন কর্ম্ম কর ভাই সব, এদিকে নজর করিও না।”

 সেনাগণ ভাব বুঝিয়া ক্ষান্ত হইল। একজন কহিল, “রহিম! তোমার ভাগ্য ভাল। এখন নবাব মুখের গ্রাস না কাড়িয়া লয়।”

 রহিম ও বিমলা চলিয়া গেল। বিমলা রহিমকে নিজ শয়নকক্ষের নীচের কক্ষে লইয়া গিয়া কহিলেন, “এই আমার নীচের ঘর; এই ঘরের রে যে সামগ্রী লইতে ইচ্ছা হয় সংগ্রহ কর; ইহার উপরে আমার গুইবার ঘর, আমি তথা হইতে অলঙ্কারাদি লইয়া শীঘ্র আসিতেছি।” এই বলিয়া তাহাকে একগোছ চাবি ফেলিয়া দিলেন।

 রহিম কক্ষে দ্রব্য-সামগ্রী প্রচুর দেখিয়া হৃষ্টচিত্তে সিন্ধুক পেটায় খুলিতে লাগিল। বিমলার প্রতি আর তিলার্দ্ধ অবিশ্বাস রহিল না। বিমলা কক্ষ হইতে বাহির হইয়াই ঘরের বহির্দ্দিক শৃঙ্খল বন্ধ করিয়া কুলুপ দিলেন। রহিম কমধ্যে বন্দী হইয়া রহিল।

 বিমলা তখন উর্দ্ধশ্বাসে উপরের ঘরে গেলেন। বিমলা ও তিলোত্তমার প্রকোষ্ঠ দুর্গের প্রান্তভাগে; সেখানে এ পর্যন্ত অত্যাচারী সেনা আইসে নাই; তিলোত্তমা ও জগৎসিংহ কোলাহলও শুনিতে পাইয়াছেন কি না সন্দেহ। বিমলা অকস্মাৎ তিলোত্তমার কক্ষধ্যে প্রবেশ না করিয়া,