পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আয়েষা
১১৫

রীতির নহে; স্থির-যৌবনা বিমলারও একাল পর্য্যন্ত রূপের ছটা লােক-মনোমােহিনী ছিল; আয়েষার রূপরাশি তদনুরূপও নহে। কোন কোন তরুণীর সৌন্দর্য্য বাসন্তী-মল্লিকার ন্যায়; নবস্ফূট, ব্রীড়াসঙ্কুচিত, কোমল, নির্ম্মল, পরিমলময়। তিলােমার সৌন্দর্য্য সেইরূপ। কোন রমণীর রূপ অপরাহ্নের স্থলপদ্মের ন্যায়; নির্ব্বাস, মুদ্রিতোন্মুখ, শুষ্কপল্লব, অথচ সুশােভিত, অধিক বিকসিত, অধিক প্রভাবিশিষ্ট, মধুপরিপূর্ণ। বিমলা সেইরূপ সুন্দরী। আয়েষার সৌন্দর্য্য নব-রবি-কর-ফুল্ল জল-নলিনীর ন্যায়; সুবিকাশিত, সুবাসিত, রসপূর্ণ, রৌদ্র-প্রদীপ্ত, না সঙ্কুচিত, না বিশুদ্ধ; কোমল, অথচ প্রোজ্জ্বল; পূর্ণ দলরজি হইতে রৌদ্র প্রতিফলিত হইতেছে, অথচ মুখে হাসি ধরে না। পাঠক মহাশয়, “রূপের আলো” কখন দেখিয়াছেন? না দেখিয়া থাকেন, শুনিয়া থাকিবেন। অনেক সুন্দরী রূপে “দশ দিক্ আলে৷” করে। শুনা যায়, অনেকের পুত্ত্রবধূ “ঘর আলাে” করিয়া থাকেন। ব্রজধামে আর নিশুম্ভের যুদ্ধে কালরূপেও আলাে হইয়াছিল। বস্তুতঃ পাঠক মহাশয় বুঝিয়াছেন “রূপের আলো” কাহাকে বলে? বিমলা রূপে আলো করিতেন, কিন্তু সে প্রদীপের আলাের মত; একটু একটু মিট্মিটে, তেল চাই, নহিলে জ্বলে না; গৃহকার্য্যে চলে; নিয়ে ঘর কর, ভাত রান্ধ, বিছানা পাড়, সব চলিবে; কিন্তু স্পর্শ করিলে পুড়িয়া মরিতে হয়। তিলোত্তমাও রূপে আলাে করিতেন—সে বালেন্দু-জ্যোতির ন্যায়; সুবিমল, সুমধুর, সুশীতল; কিন্তু তাহাতে গৃহকার্য্য হয় না; তত প্রখর নয়, এবং দুরনিঃসৃত। আয়েষাও রূপে আলো করিতেন, কিন্তু সে পূর্ব্বাহ্নিক সুর্য্য-রশ্মির ন্যায়; প্রদীপ্ত, প্রভাময়, অথচ যাহাতে পড়ে, তাহাই হাসিতে থাকে।

 যেন উদ্যানমধ্যে পদ্মফুল, এ আখ্যায়িকা মধ্যে তেমনি আয়েষা;