পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
দুর্গেশনন্দিনী

 এই কি বিমলা? তাহার সে কেশবিন্যাস নাই। মাথায় ধূলিরাশি; সে কারু-কার্য্য-খচিত ওড়না নাই; সে রত্নখচিত কাঁচলি নাই; বসন বড় মলিন। পরিধানে জীর্ণ, ক্ষুদ্র বসন। সে অলঙ্কার-ভার কোথায়? সে অংসসংস্পর্শলোভী কর্ণাভরণ কোথায়? চক্ষু ফুলিয়াছে কেন? সে কটাক্ষ কই? কপালে ক্ষত কেন? রুধির যে বাহিত হইতেছে।

 বিমলা ওস্মানের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন।

 ওস্মান পাঠানটুলতিলক। যুদ্ধ তাঁহার স্বার্থসাধন ও নিজ ব্যবসায় এবং ধর্ম্ম; সুতরাং যুদ্ধজয়ার্থ ওস্মান কোন কার্য্যেই সঙ্কোচ করিতেন না। কিন্তু যুদ্ধপ্রয়োজন সিদ্ধ হইলে, পরাজিত পক্ষের প্রতি কদাচিৎ নিষ্প্রয়োজনে তিলার্দ্ধ অত্যাচার করিতে দিতেন না। যদি কতলু খাঁ স্বয়ং বিমলা ও তিলোত্তমার অদৃষ্টে এ দারুণ বিধান না করিতেন, তবে ওস্মানের কৃপায় তাঁহারা কদাচ বন্দী থাকিতেন না। তাঁহারই অনুকম্পায় স্বামীর মৃত্যুকালে বিমলা তৎসাক্ষাৎ লাভ করিয়াছিলেন। পরে যখন ওস্মান জানিতে পারিলেন যে, বিমলা বীরেন্দ্রসিংহের স্ত্রী, তখন তাহার দয়ার্দ্রচিত্ত আরও আর্দ্রীভূত হইল। ওস্মান কতলু খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্ত্র,[১] এজন্য অন্তঃপুরেও কোথাও তাঁহার গমনে বারণ ছিল না; ইহা পূর্ব্বেই দৃষ্ট হইয়াছে। যে বিহারগৃহে কতলু খাঁর উপপত্নীসমূহ থাকিত, সে স্থলে কতলু খাঁর পুত্ত্রেরাও যাইতে পারিতেন না, ওস্মানও নহে। কিন্তু ওস্মান কতলু খাঁর দক্ষিণ হস্ত, ওস্মানের বাহুবলেই তিনি আমোদর-তীর পর্যন্ত উৎকল অধিকার করিয়াছিলেন। সুতরাং পৌরজন প্রায় কতলু খাঁর যাদৃশ ওস্মানের তাদৃশ বাধ্য ছিল। এজন্যই


  1. ইতিহাসে লেখা পুত্ত্র