পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলাপ
১১

অভিপ্রায় জানাইল। সৈন্যমধ্যে কেহ কেহ শিবিকার বার্তা, শুনিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া অপরকে কহিল, “আজ বড় নূতন পদ্ধতি।” কেহ বা উত্তর করিল, “না হবে কেন? মহারাজ রাজপুতপতির শত শত মহিষী।”

 এদিকে যুবরাজের অনুপস্থিতিকালে অবসর পাইয়া অবগুণ্ঠন-মোচনপূর্ব্বক সুন্দরী সহচরীকে কহিল, “বিমলা, রাজপুকে পরিচয় দিতে তুমি অসম্মত কেন?”

 বিমলা কহিল, “সে কথার উত্তর আমি তোমার পিতার কাছে দিব; এক্ষণে আর এ কিসের গোলযোগ শুনিতে পাই?”

 নবীনা কহিল, “বোধ করি, রাজপুত্রের কোন সৈন্যাদি তাঁহার অনুসন্ধানে আসিয়া থাকিবে; যেখানে স্বয়ং যুবরাজ রহিয়াছেন, সেখানে চিন্তা কর কেন?”

 যে অশ্বারোহিগণ শিবিকাবাহকাদির অন্বেষণে গমন করিয়াছিল, তাহারা প্রত্যাগমন করিবার পূর্বেই, সে বাহক ও রক্ষিবর্গ স্ত্রীদিগকে রাখিয়া বৃষ্টির সময়ে গ্রামমধ্যে গিয়া আশ্রয় লইয়াছিল, তাহারা ফিরিযা আসিল। দূর হইতে তাহাদিগকে দেখিয়া জগৎসিংহ মন্দিরমধ্যে পুনঃপ্রবেশপূর্ব্বক পরিচারিকাকে কহিলেন, “কয়েকজন অস্ত্রধারী ব্যক্তির সহিত বাহকগণ শিবিকা লইয়া আসিতেছে, উহারা তোমাদিগের লোক কি না বাহিরে আসিয়া দেখ।” বিমলা মন্দিরদ্বারে দাঁড়াইয়া দেখিল যে, তাহারা তাঁহাদিগের রক্ষিগণ বটে।

 রাজকুমার কহিলেন, “তবে আমি আর এখানে দাঁঁড়াইর না; আমার সহিত ইহাদিগের সাক্ষাতে অনিষ্ট ঘটিতে পারে। অতএব আমি চলিলাম। শৈলেশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করি, তোমরা নির্বিঘ্নে বাটী উপনীত হও; মোদিগের নিকট এই প্রার্থনা করি যে, আমার সহিত সাক্ষাৎ হইয়া