পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রতিমা-বিসর্জ্জন
১৬৭

করিয়া ভক্তিভাবে ইষ্টদেবকে প্রণাম করিলেন; পরে করযোড়ে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া কহিতে লাগিলেন, “গুরুদেব! দাসকে ত্যাগ করিবেন না। আমি রাজধর্ম্ম প্রতিপালন করিব; ক্ষত্রকুলোচিত কার্য্য করিব; ও পাদপদ্মের প্রসাদ ভিক্ষা করি। বিধর্ম্মীর উপপত্নী এ চিত্ত হইতে দূর করিব; তাহাতে শরীর-পতন হয়, অন্তকালে তোমাকে পাইব। মনুষ্যের যাহা সাধ্য তাহা করিতেছি, মনুষ্যের যাহা কর্ত্তব্য তাহা করিব। দেখ, গুরুদেব! তুমি অন্তর্য্যামী, অন্তস্তল পর্য্যন্ত দৃষ্টি করিয়া দেখ, আর আমি তিলোত্তমার প্রণয়প্রার্থী নহি, আর আমি তাহার দর্শনাভিলাষী নহি; কেবল কাল ভূতপূর্ব্বস্মৃতি অনুক্ষণ হৃদয় দগ্ধ করিতেছে। আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জ্জন দিয়াছি, স্মৃতিলোপ কি হইবে না? গুরুদেব! ও পদপ্রসাদ ভিক্ষা করি। নচেৎ স্মরণের যন্ত্রণা সহ্য হয় না।”

 প্রতিমা বিসর্জ্জন হইল।

 তিলোত্তমা তখন ধূলিশয্যায় কি স্বপ্ন দেখিতেছিল! এ ঘোর অন্ধকারে, যে এক নক্ষত্র প্রতি সে চাহিয়াছিল, সেও তাহাকে আর কর বিতরণ করিবে না। এ ঘোর ঝটিকায় যে লতায় প্রাণ বাঁধিয়াছিল, তাহা ছিঁড়িল; যে ভেলায় বুক দিয়া সমুদ্র পার হইতেছিল, সে ভেলা ডুবিল।

____