বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
দুর্গেশনন্দিনী

মহাশয়ের প্রাণহানি করিয়াছে। মহারাজ সেই শোকে ও ক্রোধে সন্ধির নামও শ্রবণ করিলেন না; দূতের কথায় বিশ্বাস করিলেন না; যদি মহাশয় স্বয়ং সন্ধির প্রস্তাবকর্ত্তা হয়েন, তবে তিনি সম্মত হইতে পারিবেন।”

 রাজপুত্র ওস্‌মানের প্রতি পুনর্ব্বার স্থিরদৃষ্টি করিয়া কহিলেন,―

 “সকল কথা পরিষ্কার করিয়া বলুন। আমার হস্তাক্ষর প্রেরণ করিলেও মহারাজের প্রতীতি জন্মিবার সম্ভাবনা। তবে আমাকে স্বয়ং যাইতে কেন কহিতেছেন?”

 ও। তাহার কারণ এই যে, মহারাজ মানসিংহ স্বয়ং আমাদিগের অবস্থা সম্পূর্ণ অবগত নহেন; আপনার নিকট প্রকৃত বলবত্তা জানিতে পারিবেন; আর মহাশয়ের অনুরোধে বিশেষ কার্য্যসিদ্ধির সম্ভাবনা; লিপি দ্বারা সেরূপ নহে। সন্ধির আশু এক ফল হইবে যে, আপনি পুনর্ব্বার কারামুক্ত হইবেন। সুতরাং নবাব কতলু খাঁ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, আপনি এ সন্ধিতে অবশ্য অনুরোধ করিবেন।

 জ। আমি পিতৃসন্নিধানে যাইতে অস্বীকৃত নহি।

 ও। শুনিয়া সুখী হইলাম; কিন্তু আরও এক নিবেদন আছে। আপনি যদি ঐরূপ সন্ধি সম্পাদন করিতে না পারেন, তবে আবার এ দুর্গমধ্যে প্রত্যাগমন করিতে অঙ্গীকার করিয়া যাউন।

 জ। আমি অঙ্গীকার করিলেই যে প্রত্যাগমন করিব, তাহার নিশ্চয় কি?

 ওস্‌মান হাসিয়া কহিলেন, “তাহা নিশ্চয় বটে। রাজপুতের বাক্য যে লঙ্ঘন হয় না, তাহা সকলেই জানে।”

 রাজপুত্র সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, “আমি অঙ্গীকার করিতেছি যে, পিতার সহিত সাক্ষাৎকারের পরেই একাকী দুর্গে প্রত্যাগমন করিব।”