মুহূর্ত্তের পর, যদি আর চিরন্তন ইহার সঙ্গে বেপা না হয়, কাল যদি মুক্ত হইয়া শত মহিলার মধ্যবর্ত্তী হন, আয়েষার নামে ধিক্কার করেন, তথাপি আমি ইহার প্রেমাকাঙ্ক্ষিণী দাসী রহিব। আরও শুন; মনে কস এতক্ষণ একাকিনী কি কথা বলিতেছিলাম? বলিতেছিলাম, আমি দৌবারিকগণকে বাক্যে পারি, ধনে পারি বশীভূত করিয়া দিব; পিতায় অশ্বশাল হইতে অশ্ব দিব; বন্দী পিতৃশিবিরে এখনই চলিয়া বাউন। বন্দী নিজে পলায়নে অস্বীকৃত হইলেন। নচেৎ তুমি এতক্ষণ ইহার নপান্ত্রও দেখিতে পাইতে ন;।”
আয়েষা আবার অশ্রুজল মুছিলেন। কয়ংক্ষণ নীরব থাকিয়া অনা। প্রকার স্বরে কহিতে লাগিলেন, “ওসমান, এ সকল কথা বলিয়া তোমাকে ক্লেশ দিতেছি, অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি আমায় স্নেহ কর, আমি তোমায় স্নেহ করি; এ—আমার অনুচিত। কিন্তু তুমি আজি আয়েষাকে অবিশ্বাসিনী ভাবিয়াছ। আয়েষা অন্য যে অপরাধ করুক, অবিশ্বাসিনী নহে। আয়েষা যে কর্ম্ম করে, তাহা মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারে। এখন তোমার সাক্ষাৎ বলিলাম, প্রয়োজন হয়, কাল পিতার সমক্ষে বলিব।”
পরে জগৎসিংহের দিকে ফিরিয। কহিলেন, “রাজপুঞ্জ, তুমি ও অপরাধ ক্ষমা কর। যদি ওসমান আজ আমাকে মনঃপীড়িত না করিতেন, তবে এ দগ্ধ হৃদরের তাপ কথনও তোমার নিকট প্রকাশ পাইত ন!, কখনও মনুষ্যকর্ণগোচর হইত ন॥”
রাজপুত্র নিঃশব্দে দাড়াইয়া রহিয়াছেন; অন্তঃকরণ সন্তাপে দগ্ধ হইতেছিল।
ওসমানও কথা কহিলেন না। আয়েষা আবার বলিতে লাগিলেন, “ওসমান, আবার বলি, যদি দোষ করিয়। থাকি, দোষ মার্জন করিও।