পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
দুর্গেশনন্দিনী

 কতলু খাঁ উন্মত্ত হইল। বিমলাকে ডাকিয়া কহিল, “তুমি কোথা, প্রিয়তমে।”

 বিমল কতলু খাঁর স্কন্ধে এক বাহু দিয়া কহিলেন, “দাসী শ্রীচরণে।”—অপর করে ছুরিকা—

 তৎক্ষণাৎ ভয়ঙ্কর চীৎকার-ধ্বনি করিয়া বিমলাকে কতলু খাঁ দূরে নিক্ষেপ করিল; এবং যেই নিক্ষেপ করিল, অমনি আপনিও ধরাতলশাষী হইল। বিমলা তাহার বক্ষঃস্থলে আমূল তীক্ষ ছুরিকা বসাইয়া দিয়াছিলেন।

 “পিশাচী-শয়তানী!” কতলু খাঁ এই কথা বলিয়া চীৎকার করিল। “পিশাচী নহি—শয়তানী নহি—বীরেন্দ্রসিংহের বিধবা স্ত্রী।” এই বলিয়া বিমলা কক্ষ হইতে দ্রুতবেগে পলায়ন করিলেন।

 কতলু খাঁর বাঙ্নিষ্পত্তি-ক্ষমতা ঝটিতি রহিত হইয়া আসিতে লাগিল। তথাপি সাধ্যমত চীৎকার করিতে লাগিল। বিমলাও যথাসাধ্য চীৎকার করিতে লাগিল। বিমলা ও চীৎকার করিতে করিতে ছুটিলেন। কক্ষান্তরে গিয়া কথোপকথন-শব্দ পাইলেন। বিমলা উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিলেন। এক কক্ষ পরে দেখেন তথায় প্রহরী ও খোজাগণ রহিয়াছে। চীৎকার শুনিয়া ও বিমলার ত্রস্ত ভাব দেখিয়া তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে?”

 প্রত্যুৎপন্নমতি বিমলা কহিলেন, “সর্ব্বনাশ হইয়াছে। শীঘ্র যাও, কক্ষমধ্যে মোগল প্রবেশ করিয়াছে, বুঝি নবাবকে খুন করিল।”

 প্রহরী ও খোজাগণ উর্দ্ধশ্বাসে কক্ষাভিমুখে ছুটিল। বিমলাও ঊর্দ্ধশ্বাসে অন্তঃপুর-দ্বারাভিমুখে পলায়ন করিলেন। দ্বারে প্রহরী প্রমোদক্লান্ত হইয়া নিদ্রা যাইতেছিল, বিমলা বিনা বিঘ্নে দ্বার অতিক্রম করিলেন;