পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অসাবধানতা
৪১

ময়; তিনি পঞ্চ সহস্র সেনা সর্ব্বদা একত্র রাখিতেন না; কোথায় সহস্র, কোথায় পঞ্চশত, কোথায় দ্বিশত, কোথায় দ্বিসহস্র এইরূপে ভাগে ভাগে, যখন যথায় যেরূপ শক্রর সন্ধান পাইতেন, তখন সেইরূপ পাঠাইতেন; কার্য্য সম্পাদন হইলে আর তথায় রাখিতেন না। কখন কোন্ খানে রাজপুত আছে, কোন্ খানে নাই, পাঠানেরা কিছুই স্থির করিতে পারি না। কতলু খাঁর নিকট প্রত্যহই সেনানাশের সংবাদ আসিত। প্রতে, মধ্যাহ্নে, সকল সময়েই অমঙ্গল সংবাদ আসিত। ফলে, যে কার্য্যই হউক না, পাঠান সেনার অল্প সংখ্যা দুর্গ হইতে নিষ্ক্রান্ত হওয়া দুঃসাধ্য হইল। লুঠপাঠ একেবারে বন্ধ হইল; সেনা সকল দুর্গমধ্যে আশ্রয় লইল। অধিকন্তু আহার আহরণ করা সুকঠিন হইয়া উঠিল। শত্রুপীড়িত প্রদেশ এইরূপ সুশাসিত হওয়ার সংবাদ পাইয়া মহারাজ মানসিংহ পুত্ত্রকে এই পত্র লিখিলেন,—

 “কুলতিলক! তোমা হইতে রাজাধিকার পাঠানশূন্য হইবে জানিলাম; অতএব তোমার সাহায্যার্থ আর দশ সহস্র সেনা পাঠাইলাম।”

 যুবরাজ প্রত্যুত্তর লিখিলেন,—

 “মহারাজের যেরূপ অভিপ্রায়; আর সেনা আইসে ভাল; নচেৎ ও শ্রীচরণাশীর্ব্বাদে এ দাস পঞ্চ সহস্রে ক্ষত্রকুলোচিত প্রতিজ্ঞাপালন করিবেক।”

 কুমার বীরমদে মত্ত হইয়া অবাধে রণজয় করিতে লাগিলেন। শৈলেশ্বর! তোমার মন্দিরমধ্যে যে সুন্দরীর সরল দৃষ্টিতে এই যোদ্ধা পরাভূত হইয়াছিলেন, সে সুন্দরীকে সেনাকোলাহল-মধ্যে কি তাঁহার একবারও মনে পড়ে নাই? যদি না পড়িয়া থাকে, তবে জগৎসিংহ তোমারই ন্যায় পাষাণ।