পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৮৩

রাজপুত্ত্র উত্তমরূপে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, উষ্ণীষমস্তকে মনুষ্য বটে, তাহার সন্দেহ নাই। তিনি উত্তমরূপে বৃক্ষটি লক্ষিত করিয়া রাখিলেন যে, পুনরায় আসিলে না ভ্রম হয়। পরে ধীরে ধীরে বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া নিঃশষে বিমলার নিকট আসিলেন। যাহা দেখিলেন, তাহা বিমলার নিকট বর্ণনা করিয়া কহিলেন, “এ সময়ে যদি দুইটা বর্শা থাকিত!”

 বিমলা কহিলেন, “বর্শা লইয়া কি করিবেন?”

 জ। তাহা হইলে ইহারা কে জানিতে পারিতাম। লক্ষণ ভাল বোধ হইতেছে না; উষ্ণীষ দেখিয়া বোধ হইতেছে, দুরাত্মা পাঠানেরা কোন মন্দ অভিপ্রায়ে আমাদের সঙ্গ লইয়াছে।

 তৎক্ষণাৎ বিমলার পথপার্শ্বস্থ মৃত অশ্ব, উষ্ণীষ আর অশ্বসৈন্যের পদচিহ্ন স্মরণ হইল। তিনি কহিলেন, “আপনি তবে এখানে অপেক্ষা করুন; আমি পলকমধ্যে দুর্গ হইতে বর্শা আনিতেছি।”

 এই বলিয়া বিমলা ঝটিতি দুর্গমূলে গেলেন। যে কক্ষে বসিয়া সেই রাত্রি-প্রদোষে, কেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তার নীচের কক্ষের একটি গবাক্ষ আম্রকাননের দিকে ছিল। বিমলা অঞ্চল হইতে একটি চাবি বাহির করিয়া ঐ কলে ফিরাইলেন; পশ্চাৎ জানালার গরাদে ধরিয়া দেয়ালের দিকে টান দিলেন; শিল্প-কৌশলের গুণে জানালার কবাট, চৌকাঠ, গরাদে সকল সমেত দেয়ালের মধ্যে এক রন্ধ্রে প্রবেশ করিল; বিমলার কক্ষমধ্যে প্রবেশজন্য পথ মুক্ত হইল। বিমলা কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া দেয়ালের মধ্য হইতে জানালার চৌকাঠ ধরিয়া টানিলেন; জানালা বাহির হইয়া পুনর্ব্বার পূর্ব্বস্থানে স্থিত হইল; কবাটের ভিতরদিকে পূর্ব্ববৎ গা-চাবির কল ছিল, বিমলা অঞ্চলে চাবি লইয়া ঐ কলে