পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৮৯

রাত্রে মন্দিরে গমন-কালে ও প্রত্যাগমন-কালে যাহা দেখিয়াছেন, তৎসমুদয় স্মরণ হইল। বিমলার তৎক্ষণাৎ বিবেচনা হইল, এ তুর্য্যধ্বনি কোন অমঙ্গল ঘটনার পূর্ব্বলক্ষণ। অতএব সশঙ্কচিত্তে তিনি বাতায়ন-সন্নিধানে গিয়া আম্রকানন প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন কানন-মধ্যে বিশেষ কিছুই দেখিতে পাইলেন না। বিমলা ব্যস্তচিত্তে নিজ কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন; যে শ্রেণীতে তাঁহার কক্ষ, তৎপরেই প্রাঙ্গণ; প্রাঙ্গণ-পরেই আর এক কক্ষশ্রেণী, সেই শ্রেণীতে প্রাসাদোরি উঠিবার সোপান আছে। বিমলা কক্ষত্যাগপূর্বক সেই সোপানাবলী আরোহণ করিয়া ছাদের উপরে উঠিলেন। ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। তথাপি কাননের গভীর ছায়ান্ধকার-জন্য কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিল দ্বিগুণ উদ্বিগ্নচিত্তে ছাদের আলিসার নিকটে গেলেন, তদুপরি বক্ষঃস্থাপনপূর্ব্বক মুখ নত করিয়া দুর্গমূল পর্য্যন্ত দেখিতে লাগিলেন; কিছুই দেখিতে পাইলেন না। শ্যামোজ্জ্বল শাখাপল্লব সকল স্নিগ্ধ চন্দ্রকরে প্লাবিত; কখন কখন সুমন্দ-পবনান্দোলনে পিঙ্গলবর্ণ দেখাইতেছিল; কাননতলে ঘোরান্ধকার, কোথাও কোথাও শাখাপত্রাদির বিচ্ছেদে চন্দ্রালোক পতিত হইয়াছে; আমোদরের স্থিরাম্বু-মধ্যে নীলাম্বর চন্দ্র ও তারা সহিত প্রতিবিম্বিত; দূরে অপরপাস্থিত অট্টালিকা সকলের গগনস্পর্শী মূর্ত্তি, কোথাও না তৎপ্রাসাদস্থিত প্রহরীর অবয়ব। এতদ্ব্যতীত আর কিছুই লক্ষ করিতে পারিলেন না। বিমলা বিষণ্ণ-মনে প্রত্যাবর্ত্তন করিতে উদ্যত হইলেন, এমত সময়ে তাহার অকস্মাৎ বোধ হইল, যেন কেহ পশ্চাৎ হইতে তাঁহার পৃষ্ঠদেশ অঙ্গুলি দ্বারা স্পর্শ করিল। বিমলা চমকিত হইয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন, একজন সশস্ত্র অজ্ঞাত