রাত্রে মন্দিরে গমন-কালে ও প্রত্যাগমন-কালে যাহা দেখিয়াছেন, তৎসমুদয় স্মরণ হইল। বিমলার তৎক্ষণাৎ বিবেচনা হইল, এ তুর্য্যধ্বনি কোন অমঙ্গল ঘটনার পূর্ব্বলক্ষণ। অতএব সশঙ্কচিত্তে তিনি বাতায়ন-সন্নিধানে গিয়া আম্রকানন প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন কানন-মধ্যে বিশেষ কিছুই দেখিতে পাইলেন না। বিমলা ব্যস্তচিত্তে নিজ কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন; যে শ্রেণীতে তাঁহার কক্ষ, তৎপরেই প্রাঙ্গণ; প্রাঙ্গণ-পরেই আর এক কক্ষশ্রেণী, সেই শ্রেণীতে প্রাসাদোরি উঠিবার সোপান আছে। বিমলা কক্ষত্যাগপূর্বক সেই সোপানাবলী আরোহণ করিয়া ছাদের উপরে উঠিলেন। ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। তথাপি কাননের গভীর ছায়ান্ধকার-জন্য কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিল দ্বিগুণ উদ্বিগ্নচিত্তে ছাদের আলিসার নিকটে গেলেন, তদুপরি বক্ষঃস্থাপনপূর্ব্বক মুখ নত করিয়া দুর্গমূল পর্য্যন্ত দেখিতে লাগিলেন; কিছুই দেখিতে পাইলেন না। শ্যামোজ্জ্বল শাখাপল্লব সকল স্নিগ্ধ চন্দ্রকরে প্লাবিত; কখন কখন সুমন্দ-পবনান্দোলনে পিঙ্গলবর্ণ দেখাইতেছিল; কাননতলে ঘোরান্ধকার, কোথাও কোথাও শাখাপত্রাদির বিচ্ছেদে চন্দ্রালোক পতিত হইয়াছে; আমোদরের স্থিরাম্বু-মধ্যে নীলাম্বর চন্দ্র ও তারা সহিত প্রতিবিম্বিত; দূরে অপরপাস্থিত অট্টালিকা সকলের গগনস্পর্শী মূর্ত্তি, কোথাও না তৎপ্রাসাদস্থিত প্রহরীর অবয়ব। এতদ্ব্যতীত আর কিছুই লক্ষ করিতে পারিলেন না। বিমলা বিষণ্ণ-মনে প্রত্যাবর্ত্তন করিতে উদ্যত হইলেন, এমত সময়ে তাহার অকস্মাৎ বোধ হইল, যেন কেহ পশ্চাৎ হইতে তাঁহার পৃষ্ঠদেশ অঙ্গুলি দ্বারা স্পর্শ করিল। বিমলা চমকিত হইয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন, একজন সশস্ত্র অজ্ঞাত
পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৮৯