পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাইতে এসেছে, কারণ সাধারণতঃ ও স্নান করে অনেক বেলায়, আখড়ার কাজকৰ্ম্ম মিটিয়ে। নাইতে নাইতে একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনে চেয়ে দেখি মালতী নেই, তার ঘাড়াও নেই। আমি প্ৰথমে ভাবলাম মাঝপুকুরে ইচ্ছে ক’রে ডুব দিয়েছে বোধ হয়। বিশেষতঃ সে সঁতার জানে -কিন্তু খানিক পরে যখন ও উঠল না, তখন আমার ভয় হ’ল, আমি তাড়াতাডি সেখানটাতে সীতাক দিয়ে গেলাম, হাতন্ডে দেখি মালতী নেই, ডুব দিয়ে এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে ওকে পেলাম-চুলে কাপড জড়িয়ে গিয়েছে কেমন বেকায়দায়, অতিকষ্টে তাকে ভাসিয়ে নিজে ডুবে জল খেতে খেতে ডাঙাব কাছে নিয়ে এলুম। মালতী তখন অৰ্দ্ধ অচৈতন্য, আমার ডাক শুনে আখড়া থেকে সবাই ছুটে এল-মিনিট পাঁচ-ছয় পৰে ওর শরীর সুস্থ হ’ল। উদ্ধব বাবাজী বকলে, “আমি বকলাম, সবাই বকলে। এই দিনটা থেকে ওর ওপব আমার একটা কি যেন মায়া পডে গেল। সেদিন সন্ধ্যাবেল কেবলই মনে হতে লাগল ও এখানে নিঃসহায়, একেবাবে একা । ও সবাব জন্যে খেটে মরে ওর বাপেব ধানের জমির উপস্বত্ব আখন্ডাসুদ্ধ বৈষ্ণব বাবাজীরা ভোগ করছে, কিন্তু ওz মুখেব দিকে চাইবার কেউ নেই। ও সকলের ময়লা জাম-কাপড় কেচে বেড়াবে, ভাত রেণে খাওয়াবে-সর্বারকমে সেবা কলবো, ওকে ছেলেমানুষ পেয়ে সবাই ওকে মুখের মিষ্টি তোষামোদে নাচিয়ে নিজেদের স্বাথ ষোল আনাব ওপর স’তের আনা বজায় রাখছে, কিন্তু ওক সুখ-দুঃখ কেউ দেখছে ? এই যে আজ পুকুবের ঘাটে ডুবে মরে যাচ্ছিল আর একটু হলেআমি যদি না থাকতাম । ভগবান আমাকে এ কিসোণ মধ্যে এনে ফেললেন, এ কি জালে দিন-দিন জড়িয়ে পড়ছি অামি । এদের আখড়াতে যে বিগ্ৰহ আছেন, তঁকে এরা মানুষের মত সেবা করে । সকালবেলা তাকে বাল্যভোগ দেওয়া হয়, দুপুরের ভোগ তো আছেই। ভোগের পর দুপুঙ্গে বিগ্রহকে খাটে শুইযে মশারি টাঙিয়ে দেওয়া হয় । বৈকালে বৈকালিক ভোগ দেওয়া হয়ফল, মিষ্টান্ন। রাত্রে আবা” খাটে শুইয়ে মশারি টাঙিয়ে দেয়-শীতের রাত্রে বিগ্ৰহেব গানে লেপ, আশেপাশে বালিশ । উদ্ধবদাস বাবাজী সেদিন লাল শালু কাপডের ভাল লেপ কৰে। এনেচে বিগ্রহের ব্যবহারের জন্যে-আগের লেপটা অব্যবহাৰ্য্য হয়ে গিয়েছিল । এ-সব পুতুল-খেলা দেখলে আমার হাসি পায়। সেদিন সন্ধ্যার সময় এক পেয়ে মালতীৰে বললাম-তোমাদের এতদিন হুশ ছিল না। মালতী ? ছেড়া লেপটা এই শীতে কি বলে দিতে ঠাকুরকে ? যদি অসুখ-বিসুখ হ’ত, এই তেপান্তরের মাঠে না। ডাক্তার, না কবিরাজ, দেখত কে তখন ? ছিঃ ছিঃ, কি কাণ্ড তোমাদের ? মালতী রাগে মুখ ঘুরিযে চলে গেল। ও এ-সব কথা আর কাউকে ব’লে দেয় না। ভাণ্যে, নইলে উদ্ধবদাস আখড়া থেকে আমায় বিদেয় দিতে এক বেলাও দেবি করত না। অনেক S8