পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়ত যে টিকতে পারলাম না। তাও বটে, আর দেখুন বাবুজী, সাধুরা চিড়িয়ার জাত, আজ এখানে, কাল ওখানে-এক জায়গায় কি ভাল লাগে বেশী দিন ? লোকজন বিশেষ নেই, স্থানটি অতিশয় নির্জন, কথা বলবার লোক নেই, তাৱ প্রয়োজনও বোধ করি নেই বর্তমানে-সারাদিনের মধ্যে সন্ধ্যার সময় সাধুজীর সঙ্গে बन्न একটু আলাপ করি। এতদিন কোথাও যে-শাস্তি পাই নি, এখানে তার দেখা মিলেছে, একদিন পাহাড়ের ওপরে বেড়াতে বেড়াতে জঙ্গলের মধ্যে একটা সুড়ি-পথ পেলাম। পাহাড়ের গা কেটে পথটা করা হয়েছে, ডাহনে উচু পাহাড়ের দেওয়ালটা, বায়ে অনেক নীচে গঙ্গা, ঢালটাতে চামেলীর বন, একটা প্ৰাচীন পুষ্পিত বাকাইন গাছ পথের ধারে । কিছু দূর গিয়ে দেখি, পাহাড়ের গায়ে খোদাই-করা কতকগুলো বৌদ্ধ দেবদেবীর মুক্তি-গবৰ্ণমেণ্টেল নোটিশ টাঙানো আছে। এই মুক্তিগুলো কেউ নষ্ট করতে পারবে না ইত্যাদি। আমি জানতাম না। এদের অস্তিত্ব। জায়গাটা আতি চমৎকার, সূৰ্য্যাস্তের সময় সেদিন পীর পৈতির অনুচ্চ শৈলমালার ওপরের আকাশটা লাল হয়ে উঠল, গঙ্গার বুকে আকাশজোড়া রঙীন মেঘমালার ছায়া, খোদাই-করা দেবদেবীর মুক্তি গোধুলির চাপা আলোয় কেমন একটা অনিৰ্দেশ্য শ্ৰী ধারণ করেছে—সে শ্ৰী বড় অদ্ভুত, কোন মুক্তির নাক ভাঙী, কোনটার নাক নেই, বেশীর ভাগ মুক্তিরই মুখ খসে গিয়েছে-কিন্তু গোধুলির রক্ত-পিঙ্গল আকাশের ছায়ায় ব্যক্ষিণী যেন জীবন্ত হয়ে উঠল ; পাথরে কাটা পীন স্তনযুগল যেন রক্তমাংসের ব’লে মনে হ’ল, লুম্বিনী উদ্যানের ছায়াতরুমূলে শায়িতা আসন্নপ্রসবা মায়াদেবীর চোখের পলক যেন পড়ে পড়ে, তারপর চামেলীর বন কালো হয়ে গেল, গঙ্গার বুকে নোঙর-কার বড বডি কিস্তির মাঝিরা হনুমানজার ভজন গাইতে শুরু ক’রে দিলে, পাহাডের পূব্ব দিকে ছোট কেওলিন খনিটাতে মজুরদের ছুটিং ঘণ্টা পড়ল-আমি তখনও অবাক হয়ে দাডিয়েই আছি। ••• *াঢ় দেশের মাঠে সেই খালের ধারের তালবনে সেদিন ধে অদ্ভুত ধরনের শান্তি ও আনন্দ পেয়েছিলুম, সেটা আবার পাবার আশায় কতক্ষণ অপেক্ষা করলুম-কিন্তু পেলাম। কই ? তার বদলে একটা ছবি अgन ५ । আমি জানি এ-সব কথা বলে কি কিছু বোঝানো যায় ? যার না হয়েছে, সে কি পরের লেখা পড়ে কিছু বুঝতে পারবে, না। আমিই বোঝাতে পারবো ? মনে হ’ল কোথায় যেন একজন পথিক আছেন, ঐ নীল আকাশ, ঐ রঙীন মেঘমালা, এই কলরবপূর্ণ জীবনধারায় পেছনে তিনি চলেছেন••• চলেছেন••• কোথায় চলেছেন নিজেই হয়ত জানেন না । তীর কোন সঙ্গী নেই, তঁাকে কেউ বোঝে না, তঁকে কেউ ভালবাসে না। অনাদি অনন্তকাল ধরে তিনি এক এক পথ চলেছেন। এই দৃশ্যমান বিশ্ব, এদের সমস্ত সৌন্দৰ্য্য-তিনি আছেন বলেই Vet St.