পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কতবার ভগবানের কাছে প্ৰাৰ্থনা জানিয়েছি-“ওর কষ্ট আমি আর দেখতে পারি নে, আপনি ওকে একটু দুধ দিন।” ওর মুখের সে অবোধ উল্লাসের হাসি প্ৰতিবার ছুরির মত আমার বুকে বিধেছে। কত, বার মনে মনে ভেবেছি আমি যদি দেশের ডিকুটেটর হতাম, তবে আইন ক’রে দিতাম শিশুদের দুধ না দিয়ে কেউ আর কোন কাজে দুধকে লাগাতে পারবে না। কতবার ভেবেছি বৌদিদি যদি না বঁাচে, এই কচি শিশুকে আমি কি ক’রে মানুষ করব ? স্তন্যদুগ্ধ একে কেউ দেবে না। এই পাড়াগায়ে, বিলিয়ে দিলেও মেয়েসস্তান কেউ নিতে চাইহে না-নিতান্ত নীচু জাত ছাড়া। আটঘরাতে থাকতে ছেলেবেলায় এরকম একটা ব্যাপার শুনেছিলুম-গ্রামের শশীপদ ভট্টচাজের কেউ ছিল না-এদিকে শিশু দুটিই মেয়ে, অবশেষে যদু মুচির বৌ এসে মেয়ে দুটিকে নিয়ে গিয়েছিল। এই সোনার খুকীকে সেই রকম বিলিয়ে দিতে হবে পরের হাতে ? কত বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি ঘুমন্ত শিশুর মুখের দিকে চেয়ে এই ভাবনায়। এই বিপদে আমার প্রায়ই মনে হয়েছে মালতীর কথা । মালতী আমায় এ বিপদ থেকে উদ্ধার করবে, সে কোন উপায় বাৰ করবেই, যদি খুকীকে বুকে নিয়ে তার কাছে গিয়ে দাডাই। সে চুপ ক’রে থাকতে পারবে না। তার ওপর অভিমান ক’বে চলে এসেছিলাম, দেখা পৰ্য্যন্ত ক’ৱে আসি নি আসবার সম! -আর তার পর এতদিন কোন খোঁজখবর নিই নি-একখানা চিঠি পৰ্য্যন্ত দিই নি, আমাৰ বিপদের সময় সে আমার সব দোষ ক্ষমা ক’রে নেবে। কিন্তু খুকী আমায় সব চিন্তা থেকে মুক্ত ক’রে দিলে। তার যে হাসি কেউ দেখতে চাই না, একদিন শেষরাত্রি থেকে সে হাসি চিরকালের জন্য মিলিয়ে গেল। অল্পদিনের জন্ধে এসেছিল। কিন্তু বড় কষ্ট পেয়ে গেল। কিছুই সে চায় নি, শুধু একটু মাতৃস্তন্য, কি লোলুপ হ:ে উঠেছিল তার জন্যে, তার ক্ষুদে ক্ষুদে হাত দুটি দিয়ে ব্যগ্ৰভাবে আমার আঙুলটা আঁকড়ে ধরে কি অধীর আগ্রহে সেটা চুষত মাতৃন্তন ভেবে! আমারও কি কম কষ্ট গিয়েছে অবো শিশুকে এই প্ৰতারণা করতে ? জগতে কত লোক কত সঙ্গত অসঙ্গত খেয়াল পরিতৃপ্ত করবা সুযোগ ও সুবিধা পাচ্ছে, আর একটি ক্ষুদ্র অক্ষুটবাক শিশুর নিতান্ত ন্যায্য একটা সাধ অপূর্ণ র.ে গেল কেন তাই ভাবি ৷ SV বৌদিদি ক্ৰমে সেরে উঠলেন। কিছুদিন পরে আমার হঠাৎ একদিন একটু জীৱ হ’ল। ক্ৰ জর বেঁকে দাঁড়াল, আমি অজ্ঞান অচৈতন্য হয়ে পড়লাম। দিনের পর দিন যায় জর ছা! t