পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন মেমোরা পড়াতে আসত না, বিকেলে আমরা ভাইবোনে মিলে বাংলার উঠোনে সাট, খেলছিলাম। সূৰ্য্য অন্ত যাবার বেশী দেরি নেই-মা রান্নাঘরে কাপড় কাচাবার জন্তে সোভা সাবান জলে ফোটাচ্ছিলেন, থাপা লণ্ঠন পরিষ্কার কাজে খুব ব্যস্ত-এমন সময় আমার হঠাৎ চোখে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ষার দূৱ শিখরব্রাজির ওপর আর একটা বড় পৰ্ব্বত, স্পষ্ট দেখতে পেলাম তাদের ঢালুতে ছোট-বড় ঘরবাড়ি, সমস্ত ঢালুটা বনে ঢাকা, দেবমন্দিরের মত সরু সরু ঘরবাড়ির চুড়া ও গম্বুজগুলো অদ্ভুত রঙের আলোয় রঙীন-অন্তসুৰ্য্যের মায়াময় আলো ষা কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে পড়েছে তা নয়-তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ও সম্পূর্ণ অপূৰ্ব্ব ধরনের। সে-দেশ ও ঘরবাড়ি যেন একটা বিস্তীর্ণ মহাসাগরের তীরে-কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর থেকে সে মহাসাগর কতদূৱ চলে গিয়েছে, আমাদের এদিকেও এসেছে, ভুটানের দিকে গিয়েছে। তার কুলকিনারা নেই; যদি কাউকে দেখাতাম সে হয়তো বলত আকাশ ওই রকম দেখায়, আমায় বোকা বলত। কিন্তু আমি বেশ জানি যা দেখচি তা মেঘ নয়, আকাশ নয়-সে। সত্যিই সমুদ্র। আমি সমুদ্র কখনো দেখিনি, তাই কি, সমুদ্র কি রকম তা আমি জানি। বাবার মুখে গল্প শুনে আমি যে রকম ধারণা করেছিলাম সমুদ্রের, কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরকার সমুদ্রটা ঠিক সেই ধরনের। এর বছর দুই পরে মেমেরা আমাদের বাড়ি পড়াতে আসে, তারা দাদাকে একখানা ছবিওয়ালা ইংরেজী গল্পের বই দিয়েছিল, বইখানার নাম রবিনসন ক্রুশো-তাতে নীল সাগরের রঙীন ছবি দেখেই হঠাৎ আমার মনে প’ড়ে গেল, এ আমি দেখেছি, জানি-আরও ছেলেবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর १रु সন্ধ্যায়-এই ধরনের সমূদ্র আমি দেখেছিলাম-কুলকিনারা নেই, অপার-ভুটানের দিকে চলে মিস নটনকে এ-সব কথা বলবার আমার ইচ্ছে ছিল । অনেকদিন মিসনটনি আমায় কাছে ডেকে আদর করেছে, আমার কানের পাশের চুল তুলে দিয়ে আমার মুখ দু-হাতের তেলোর মধ্যে নিয়ে কত কি মিষ্টি কথা বলেছে, হয়তো অনেক সময়-তখন বুড়ী মেম ছাড়া ঘরের মধ্যে কেউ ছিল না-অনেকবার ভেবেছি। এইবার বলব।--কিন্তু বলি-বলি ক’রেও আমার সে গোপন কথা মিসনটনকে বলা হয়নি। কথা বলা তো দূরের কথা, আমি সে-সময়ে মিস নটনের মুখের দিকে লজ্জায় চাইতে পারতাম না-আমার মুখ লাল হয়ে উঠত, কপাল ঘৈমে উঠতি-সারা শরীরের সঙ্গে জিবও যেন অবশ হয়ে থাকত-চেষ্টা করেও আমি মুখ দিয়ে কথা বার করতে পারতাম না । অথচ আমার মনে হ’ত এবং এখনো মনে হয় যদি কেউ আমার কথা বোঝে, তবে মিলনটনই বুঝৰে। মাস দুই আগে আমাদের বাড়িতে এক নেপালী সন্ন্যাসী এসেছিল। পচাং বাগানের বড়বাৰু বাশার বন্ধু, তিনিই বাবার ঠিকানা দেওয়াতে সন্ন্যাসীটি সোনাদা স্টেশনে যাবার পথে R