পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* জানিবই বা এ সব ? ' মুশকিল। এই ষে এত সাবধানে চললেও পদে পদে আমরা জ্যাঠাইমাদের কাকীমাদের কাছে অপরাধী হয়ে পড়ি। আমরা লোকালয়ে কখনো বসবাস করিনি বলেই হােক বা এদের এখানকার নিয়ম-কানুন জানিনে বলেই হোক, বুঝতে পারিনে যে কোথায় আমাদের অপরা" “ঘটছে বা ঘটতে পারে। রাত্রে যে কাপড়খানা প’রে শুয়ে থাকি, সেইখানা পরনে থাকলে সকালে যে আলনা ছুতে নেই, তার দরুন আলনাসুদ্ধ কাচা কাপড় সব নোংরা হয়ে যায়, বা বাড়ির আশপাশের খানিকটা সুনির্দিষ্ট অংশ পবিত্র, কিন্তু সীমানা পেরিয়ে গেলেই হাত-পা না ধুয়ে বা গঙ্গাজল মাথায় না দিয়ে ঘরদোরে ঢুরুতে নেই-এ-সব কথা আমরা জানিনে, শুনিওনি-যুক্তির দিক দিয়েও বুঝতে পারিনে। আমাদের বাড়ির খিড়কিতে খানিকটা বন একদিন বিকেলে আমি, সীতা ও দাদা সেখানে কুঁড়েঘর বাধিবার জন্যে নোনাগাছের ডাল কাটছি।--কাকীমা দেখতে পেয়ে বললেন, ওখানে গিয়ে জুটেছ সব ? ভাগ্যিস চোখে পড়ল এক্ষুনি তো ওই সব নিয়ে উঠতে এসে দোতলার দালানো! --মা গো মা, মেলেচ্ছ খিরিস্টানো মত ব্যাভার, আঁস্তাকুড় ঘেটে খেলা হচ্ছে স্থাখো ! সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে চারিদিকে চেয়ে দেখলাম, আস্তাকুড়ের অন্য কোনো লক্ষণ তো নেই! দিব্যি পরিষ্কার জায়গা, ঘাসের জমি আর বনের গাছপালা । আমি অবাক হয়ে বললামকাকীমা, এখানে তো কিছু নোংরা নেই ?--- এসে দেখুন। বরং কেমন পরিষ্কার কাকীমার মুখ দিয়ে খানিকক্ষণ কথা বার হ’ল না-তিনি এমন কথা জীবনে কখনে শোনেননি। তারপর বললেন-চোখে কি চ্যােলা বেরিয়েছে নাকি ? এটো হাড়িকলসী ফেলা রয়েছে দেখছি না। সামনে ?•••কাচা কাপড় প’রে কোন ছেলেমেয়েটা এই বিকেলে পা থেকে অতি দূরে বনজঙ্গলের মধ্যে যায়? ওটা অ্যান্তাকুড় হ’ল না ? আবার সমানে তককো তারপর খুড়ীমা হুকুম দিলেন আমাদের সবাইকে এক্ষুনি নাইতে হবে। আমরা অবাক হ!ে গেলাম-নাইতে হবে কেন ? সামনে হাত তিন-চার দূরে গোটাকতক ভাঙা হাঁড়িকুড়ি পড়ে আছে বটে, কিন্তু তার দরুণ গোটা বনটা অপরিষ্কার কেন হবে তা বুঝতে পারলাম না। আমরা তিনজনে কেউ। বিশে ক’রে এটা আরো বুঝতে পারলাম না যে, পথ থেকে দূরে বনের মধ্যে বিকেলে কাপড় পরে যেতে দোষটা কিসের । চা-বাগানে থাকতৃে তো কত দূর দূর আমরা চলে যেতাম, কার্ট রোড় পচাঙের বাজার ; এখানেই বা কি বন, সেখানকার সেই স্বনিবিড় বনানী পদচিহ্নহীন নিজৰ্ন আধা-অন্ধকার-কতদূরে, যেখানে যেখানে গিয়েছি কাপড় প’রেই তো গিয়েছি।--

  • দাদা একটু ভীতু, সে ভয়ে নাইতে রাজী হ’ল। আমি বললাম-সীতা, তুই আর আর্টি নাইবো না, কখখনো নী। ፮Ã

Aty