পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার এই রোগ সারিয়ে দাও, আমার যেন এ-রকম আর কখনও না হয় । তোমার জয় হোক, তোমার রাজত্ব আসুক, আমেন। • সকালে সুনি ক’রে এসে দেখি সীতা আমাদের ঘরের বারান্দাতে এক কোণে খুঁটি হেলান দিয়ে বসে কি পড়ছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম-দেখি কি পড়ছিস সীতা ? সীতা এমন একমনে বই পড়ছে যে বই থেকে চোেখ না তুলেই বললে-ও-পাড়ার বৌদিদির কাছ থেকে এনেছি-প্ৰফুল্পবালা-গোড়াটা একটু পড়ে স্থাখো কেমন চমৎকার বই দাদা আমি বইখানা হাতে নিয়ে দেখলাম, নামটা “প্ৰফুল্লবালা’ বটে। আমি বই পড়তে ভালবাসিনে, বইখানা ওর হাতে ফেরত দিয়ে বললাম-তুই এত বাজে বই পড়তে পারিস ! সীতা বললে-বাজে বই নয়। দাদা, প’ড়ে দেখো এখন। জমিদারের ছেলে সতীশের সঙ্গে এক গরিব ভট্টাচাষ্যি বামুনের মেয়ে প্ৰফুল্লবালার দেখা হয়েছে। ওদের বোধ হয় বিয়ে হবে। সীতা দেখতে ভাল বটে, কিন্তু যেমন সাধারণতঃ ভাইয়েরা বোনেদের চেয়ে দেখতে ভাল হয়, আমাদের বেলাতেও তাই হয়েছে । আমাদের মধ্যে দাদা সকলেৱ। চেয়ে সুন্দর-ষোমন বুড়ি, তেমনই চোখমুখ, তেমনই চুল-তারপর সীতা, তারপর আমি। দাদা যে সুন্দর, এ-কথা শত্রুতেও স্বীকার করে-সে। আগে থেকে ভাল চোখ, ভাল মুখ, ভাল রঙ দখল ক’রে বসেছে-আমার ও সীতার জন্যে বিশেষ কিছু রাখে নি । তা হলেও সীতা দেখতে ভাল । তা ছাড়া আবার শৌখীিন-সৰ্ব্বদা ঘষে মেজে, খোপাটি বেঁধে, টিপটি প’রে বেড়ানো তার স্বভাব। কথা বলতে বলতে দশবার খোপায় হাত দিয়ে দেখছে খোপা ঠিক আছে কি-না এ নিয়ে এ-বাড়িতে তাকে কম কথা সহ্য করতে হয় নি। কিন্তু সীতা বিশেষ কিছু গায়ে মাখে না, কারুর কথা গ্রাহের মধ্যে আনে না-চিরকালের একগুয়ে স্বভাব তার । আমার মনে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়, আমাদের তো পয়সা নেই, সীতাকে তেমন ভাল রে। বিয়ে দিতে পারব না-এই সব পাড়াগায়ে আমার জ্যাঠামশায়দের মত বাড়িতে, আমার গ্যাঠাইমার মত শাশুড়ীর হাতে পড়বে।--কি দুর্দশাটাই যে ওর হবে । ওর এত বই পড়ার বঁক যে, এ-পাড়ার ও-পাড়ার বৌ-বিদের বাক্সে যত বই আছে চেয়ে-চিন্তে এনে এ-সংসারের ঠিন কাজের ফঁাকে ফঁাকে সব পড়ে ফেলে দিয়েচে । জ্যাঠাইমা তো এমনিই বলেন, ও-সব অলুক্ষণে কাণ্ড বাপু-মেয়ে-মানুষের আবার অত বই পড়ার শখ, অতি সাজগোজের টা কেন ? পড়বে তেমন শাশুড়ীর হাতে, ঝাঁটার আগায় বই পড়া ঘুচিয়ে দেবে তন দিনে ৷” sy সীতার বুদ্ধি খুব ৷ ‘শতগল্প” ব’লে একখানা বই ও কোথা থেকে এনেছিল, তাতে সোনামুখী ও ছাইমুখী’ ব’লে একটা গল্প আছে, সৎমার সংসারে গুণবতী লক্ষ্মীমেয়ে সোনামুখী s