পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবে ঢুকেছি, এমন ভাবি ক’রে বললাম-“ওগো কই, কোথায় গেলে, ফুলকপিগুলো নামিয়ে নাও না ? ছেলেটার জর আজ কেমন আছে ?” মেয়েরা সব হেসে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ল । আমার উৎসাহ গেল আরও বেড়ে। আমি বিরক্তির স্বরে বললাম, “আই, ঐ তো তোমার দোষ ! কুইনিন দেওয়া আজ খুব উচিত ছিল। তোমার দোষেই ওরা অসুখ যাচ্ছে না। খেতে দিয়েছ কি ?” আমার স্ত্রী অপ্ৰতিভা হয়ে খুব নরম সুরে কি একটা জবাব দিতেই রাগ পড়ে গেল আমার। বললাম-“ওই পুটলিটা খোলো, তোমার একজোডা কাপড় আছে আর একটা তরল আলতা-”, মেয়েরা আবার খিল খিল করে হেসে উঠল। বীরুর ছোট বৌদিদি মুখে কাপড় গুজে হাসতে লাগলো। আমি বললাম-“ইয়ে করো, আগে হাত-পা ধোয়ার জল দিয়ে একটু চায়ের জল চড়াও দিকি ? সেই কখন ট্রেনে উঠেচি -বাকুনির চোটে আর এই দু-কোশ হেঁটে খিদে পেয়ে গিয়েছে-আর সেই সঙ্গে একটু হালুযা -কাগজের ঠোঙা খুলে দেখা কিশমিশ এনেছি কিনে, বেশ ভাল কাবুলী-” বীরুর কাকীমা তো ডাক ছেড়ে হেসে উঠলেন। বীরুর মা বললেন- “ছোড়া পাগল । কেমন সব বলচে দেখ, মাগো মা, উঃ-আর হেসে পারিনে ?” বীরুর ছোট বৌদিদির দম বন্ধ হয়ে যাবে বোধ হয়। হাসতে হাসতে। বললে-“ও মা, আমি যাব কোথায়! ওর মনে মনে ওই সব শখ আছে, ওর ইচ্ছে ওর বিয়ে হয়, বৌ নিয়ে অমনি সংসার করে-উঃ মা রে!” 4. সন্ধ্যা উত্তীৰ্ণ হয়ে গেছে । আমি রান্নাঘরে বসে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করাচি । রান্না এখনও শেষ হয় নি। আমি বললাম-“চিংড়ি মাছটা কেমন দেখলে, খুব পচেনি তো ? কালিয়াটায় ঝাল একটু বেশি করে দিও।” বীরুর কাকীমা বললেন, “ই রে. তুই কি কেবল খাওয়া-দাওয়ার কথা বলবি বৌয়েব সঙ্গে ?” কিন্তু আর কি ধরনের কথা বলব খুজে পাইনে। ভাবলাম খানিকক্ষণ, আর কি কথা বলা উচিত ? আমি এই ধরনের কথা সকলকে বলতে শুনেছি স্ত্রীর কাছে। ভেবে তেবে বললাম-“খুকীর জন্যে জামাটা আনবো, কাল ওব গায়ের মাপ দিও তো । আর জিজ্ঞেস করো কি রঙ ওর পছন্দ-না, না-এখন আর ঘুম ভাঙিয়ে জিজ্ঞেস করবার দরকাব নেই, ছেলেমানুষ ঘুমুচ্ছে, থাক। কাল সকালেই-” খুব গম্ভীর মুখে এ-কথা বলতেই মেয়েরা আবার ফুেসে উঠল দেখে আমি ভারি খুশি হয়ে উঠলাম। আরও বাহাদুরি নেবার ইচ্ছায় উৎসাহের স্বৱে বললাম-“আমি নেপালী নাচ জানি-চা-বাগানে থাকতে আমি দেখে দেখে শিখেছি।”